পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

চেষ্টা করে। পিতা যত মুখভার করে থাকে, পদ্মাবতী ততই হাস্যে, নৃত্যে, সঙ্গীতে, আদরে, আলাপে পিতাকে সারাক্ষণ বেষ্টন করে থাকে। পদ্মাবতী স্নেহে যতই উদ্বেল হয়ে ওঠে, ব্রাহ্মণের অন্তরের বেদনা ততই নিবিড়তর হয়ে উঠতে থাকে। এ কন্যাকে কি করে দেবদাসীর জীবনে নির্ব্বাসিত করা যায়? ব্রাহ্মণ কাতরস্বরে প্রার্থনা করে, হায় জগন্নাথদেব, তুমি কি এতই নির্ম্মম?

 ক্রমশঃ ব্রাহ্মণ নিজের অন্তরে বলসঞ্চয় করে। স্থির করে, শপথের কথা আর সে ভাববে না। আবার পূর্ব্বেকার মতন সহজ স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে। পদ্মাবতীও পিতাকে আনন্দিত দেখে আত্মপ্রসাদ লাভ করে, তার স্নেহে পিতার অন্তরের বিষাদ সে দূর করতে পেরেছে। আবার নৃত্যে সঙ্গীতে মুখর হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণের গৃহাঙ্গন।

 কিন্তু দেবতা যাকে চায়, মানুষের সাধ্য কি তাকে ধরে রাখে? দেবতার কাজে যার প্রয়োজন, কোন মাতাপিতার স্নেহ তাকে পারে না আটক করে রাখতে।

 সহসা একদিন পদ্মাবতী শয্যাশায়ী হলো। নাচতে নাচতে তার সর্ব্বাঙ্গ ভারী আর অবশ হয়ে উঠলো। অচৈতন্যের মতন সে পড়ে গেল। ব্রাহ্মণ-দম্পতী তৎক্ষণাৎ বৈদ্যকে ডেকে পাঠালো।

 বৈদ্য এসে পরীক্ষা করে দেখেন, নাড়ী একান্ত চঞ্চল, অস্বাভাবিক দেহের উত্তাপ। পদ্মাবতীর মুখে কোন কথা নেই। জ্বরে বেহুঁস।

 বৈদ্য ওষুধের পর ওষুধ দেন। প্রলেপের পর প্রলেপ। কোন কিছুতেই কোন ফল হয় না। শিয়রে জেগে বসে থাকে মাতা আর পিতা।

 হঠাৎ পদ্মাবতী সেই অর্দ্ধ-অচৈতন্য অবস্থার ভেতর থেকে চীৎকার করে ওঠে, যাই, যাই প্রভু!

 ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণীর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু-ধারা গড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণের ধারণা, কন্যার অন্তিম মুহূর্ত্ত সমুপস্থিত। সস্নেহে জিজ্ঞাসা করে, কোথায় যাবি মা?

 পদ্মাবতী বলে, প্রভুর কাছে! জগন্নাথ প্রভুর কাছে! তিনি আমাকে ডাকছেন!

 ব্রাহ্মণ বুঝতে পারে। এতদিন আত্ম-প্রবঞ্চনা করে যে-সত্যকে ঢেকে রেখেছিল, নির্ম্মম আঘাতে আজ দেবতা সে আত্মপ্রতারণার আবরণকে ছিন্ন

[দশ]