পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলার জাতীয় জীবনে
গীতগোবিন্দের স্থান

 বাংলার জাতীয় জীবনের সঙ্গে কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্য একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। মানুষের অগ্রগতির ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, এক-একটা যুগকে প্রভাবান্বিত করে যেমন এক-একজন মহাপুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন, তেমনি মানুষের এগিয়ে-চলার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক-একখানি বই; সেই এক-একখানি বই-এর ভেতর যে-আলো, যে-শক্তি জমা হয়ে থাকে, তা থেকে পরবর্ত্তী যুগ আলোকিত হয়ে ওঠে। যিশুর আবির্ভাবের আগে যেমন জন দি ব্যাপটিষ্ট এসে তাঁর আগমনের পথকে তৈরী করেছেন, চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের আগে যেমন এসেছেন অদ্বৈত আচার্য্য, ঠিক তেমনি এক-একটা যুগান্তরকারী আন্দোলনের আগে এসেছে এক-একখানি বই…সেই সব অগ্রগামী বাণীদূতের ভাব-বন্যায় পুরাণো জীর্ণ নোংরামি সব ভেসে গিয়েছে, নতুন করে তৈরী হয়েছে মানুষের মনের ক্ষেত্র, যার ফলে সম্ভব হয়েছে নতুন আন্দোলন।

 পৃথিবীর সমস্ত বড় আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায় এই একই প্রক্রিয়া, সাহিত্য আগে এসে ক্ষেত তৈরী করেছে, তারপর সেই তৈরী ক্ষেতের ওপর গজিয়ে উঠেছে নতুন আন্দোলনের সবুজ শস্য। ফরাসী বিপ্লবের আগে তাই দেখি ভল্‌টেয়ার আর রুশোর সাহিত্য, রুশ-বিপ্লবের আগে দেখি গোগল থেকে আরম্ভ করে গর্কী পর্য্যন্ত সাহিত্যিকদের অবিরাম সাধনা, বাংলাদেশে স্বদেশী-আন্দোলনের আগে দেখি আনন্দমঠের সৃষ্টি, বন্দেমাতরম্ মন্ত্রের আবির্ভাব।

 ইংরেজ-আগমনের আগে পর্য্যন্ত বাংলার জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় বিপ্লব সংসাধিত হয় চৈতন্যদেবের আবির্ভাবে। শাস্ত্র, পুঁথি আর জাতিভেদের অপব্যবহারে

[দু’শ একষট্টি]