সাহিত্য হিসাবে
গীতগোবিন্দ
ভারতীয় সাহিত্য বলতে একদিন বোঝাত সংস্কৃত-সাহিত্য। হিন্দু-ভারতের সমস্ত সংস্কৃতি, প্রাণ ও মনের সমস্ত ঐশ্বর্য্য পড়ে আছে সংস্কৃতের অক্ষয় ভাণ্ডারে। রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং যুদ্ধ-বিগ্রহের অভিশাপের ফলে এই বিরাট সাহিত্যের বিপুল অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সংস্কৃত-কাব্যের ইতিহাসে আমরা কালিদাস, ভবভূতি, মাঘ ইত্যাদি কয়েকজনের নাম ও কীর্ত্তির সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত, কিন্তু শত শত প্রতিভাবান্ কবি এই ভারতবর্ষে জন্মেছেন, যাঁদের রচিত গ্রন্থের আজ আর কোন নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন বহু কবি আছেন, যাঁদের হয়ত একটি শ্লোক পড়ে আছে, না হয় দুটী শ্লোক, কিন্তু সেই দু-একটী শ্লোকের ভেতরই তাঁদের অসামান্য প্রতিভার বিদ্যুৎ-দীপ্তি সহজেই চোখে পড়ে। এই বিরাট কাব্যের স্রোতস্বিনী যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছেদ ধারায় প্রবাহিত হয়ে যেখানে এসে শেষ হয়েছে, সেখানে বিরাজ করছেন জয়দেব কবি। জয়দেবের পর যে সংস্কৃত ভাষায় কবি জন্মগ্রহণ করেননি, সেকথা বলছি না, জয়দেব হলেন সংস্কৃত কাব্য-সাহিত্যের শেষতম প্রতিভাধর অমর কবি। জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্য সংস্কৃত সাহিত্য আর দেশজ প্রাকৃতভাষার সাহিত্যের সন্ধিক্ষণে বিরাজ করছে।
গীতগোবিন্দের ভেতর যেমন একদিকে দেখা যায় বহুকাল বহমান সংস্কৃত ভাষার শেষ-বিবর্ত্তনের রূপ, তেমনি তার মধ্যে দেখা যায় নতুন বাংলা সাহিত্যের জন্মের সূচনা। গীতগোবিন্দের ভাষার সঙ্গে কালিদাস ভবভূতির ভাষার পার্থক্য পড়তে গেলেই চোখে পড়ে। গীতগোবিন্দের বহু শ্লোকে সংস্কৃত-ব্যাকরণের চিহ্ন প্রায়ই চোখে পড়ে না, দু-একটা অনুস্বার আর বিসর্গ বাদ দিলেই সেটা বাংলা ভাষার মতন শোনায়। সেই জন্যে সাহিত্যের ইতিহাসে গীতগোবিন্দ একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
ভাষা-শিল্পী হিসাবে জয়দেব একদিকে অতুলনীয় কীর্ত্তি অর্জ্জন করেছেন। সংস্কৃত ভাষার শব্দ-বিন্যাসের মধ্যে যতখানি মাধুর্য্য ও ঐশ্বর্য্য থাকা সম্ভব, শব্দ-শিল্পী
[দু’শ চৌষট্টি]