পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করবার একটা বিশেষ তাৎপর্য্য আছে। ইংরেজী শিক্ষার প্রভাবে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোক গীতগোবিন্দকে অশ্লীল বলে মনে করতেন বা করেন। গীতগোবিন্দের মধ্যে রাধাকৃষ্ণের যে মিলন-বর্ণনা আছে, তার মধ্যে তাঁরা যৌন-সম্ভোগের প্রকাশই দেখতে পান এবং সেই জন্যে প্রকাশ্যে নাক সিঁটকে গোপনে পড়ে তার যৌন-স্বাদ গ্রহণ করেন। একথা অবশ্য ঠিকই যে, গীতগোবিন্দ বালক বা শিশুদের জন্যে লেখা নয়, গীতগোবিন্দ হলো তাঁদের জন্যে যাঁদের বস্তু-জ্ঞান হয়েছে, যাঁরা রসের অধিকারী, যাঁরা দেহকে জানেন ও চেনেন এবং জানেন ও চেনেন বলেই দেহের ওপারে দেহাতীতকেও জানেন।

 গীতগোবিন্দ কিংবা বৈষ্ণব-কবিতার সম্ভোগ-লীলার বর্ণনার পেছনে যে আধ্যাত্মিক তত্ত্ব আছে, আমি সেই আধ্যাত্মিক তত্ত্বের ব্যাখ্যার কথা এখানে তুলতে চাই না…সাহিত্যিক হিসাবে, আমার কাছে গীতগোবিন্দ হলো প্রথমত একখানি অমর সাহিত্য-সৃষ্টি এবং জগতের প্রত্যেক সার্থক সাহিত্য-সৃষ্টি যে-রীতি অনুসরণ করে শ্লীলতা ও অশ্লীলতা দুই-এরই ঊর্দ্ধে চলে যায়, গীতগোবিন্দও তেমনি শ্রীলতা ও অশ্লীলতার ঊর্দ্ধে এক পরম রস-বস্তু। সাহিত্যের ইতিহাসে যুগে যুগে দেখেছি, এক শ্রেণীর তত্ত্ব ব্যবসায়ী এই শ্লীলতা আর অশ্লীলতার প্রশ্ন নিয়ে অযথা চীৎকার করে গিয়েছেন এবং এখনো হয়ত করবেন। কিন্তু রসিকজনেরা এই সমস্যার মীমাংসা সর্ব্বকালের জন্যে করে গিয়েছেন। যৌন-ব্যাপারের উল্লেখমাত্রই তা অশ্লীল হয় না, শ্রেষ্ঠ শিল্পী বা কবির কাছে একটা ফুলের বিকাশও যা, যৌন-লীলাও তাই। শ্রেষ্ঠ শিল্প হলো শ্লীলতা এবং অশ্লীলতা দুয়েরই ঊর্দ্ধে।

[দু’শ সাতষট্টি]