পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রবাস ❀ বিরহ ❀ ও ❀ মাথুর

 নায়ক ও নায়িকার পূর্ব্ব-সম্মেলনের পর যখন কার্য্যগতিকে নায়ককে স্থানান্তরে যেতে হয়, তখন সুরু হয় প্রবাসের বেদনা অথবা বিরহ। প্রবাস আবার দু’ রকমের, অদূর প্রবাস ও সুদূর প্রবাস। কৃষ্ণ যখন কালীয় নাগকে দমন করবার জন্যে গিয়েছিলেন, তিনি নিকটেই ছিলেন কিন্তু সেই ক্ষণিক বিরহেই গোপীরা আকুল হয়ে ওঠে। কৃষ্ণ প্রতিদিন গোচারণে যেতেন। গোপীরা তাঁর আশা পথ চেয়ে কাতর হয়ে বসে থাকতো, কখন শ্রীকৃষ্ণ ফিরছেন। এই হলো অদূর প্রবাস। সুদূর প্রবাসের ব্যথা তিন রকমের বিরহে প্রকাশিত হয়,—ভাবী বিরহ, ভবন্ বিরহ আর ভূত বিরহ। অক্রূর বৃন্দাবনে এসেছেন, শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে যাবেন বলে। সেই সংবাদে শ্রীমতী আর গোপললনারা আকুল হয়ে ওঠে। এ হলো ভাবী বিরহ অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে যে বিরহ ঘটবে, তার জন্যে মর্ম্মজ্বালা। শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় যাচ্ছেন, অশ্রু জলের ভেতর দিয়ে গোপললনারা দেখছে কৃষ্ণের রথের চাকা থেকে ধূলো উঠছে। সেই চাকার গতির সঙ্গে মথিত হয়ে যাচ্ছে গোপিকাদের অন্তর। এ হলো ভবন্ বিরহ অর্থাৎ যে-বিরহ সদ্য সদ্য ঘটছে। আবার ফিরে আসবো, এই আশা দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গিয়েছেন, অনিমেষ-আঁখি গোপীরা চেয়ে আছে, মাসের পর মাস চলে যায়, বৎসরের পর বৎসর চলে যায়, শ্রীকৃষ্ণ আর মথুরা থেকে ফিরে আসেন না। এ হলো ভূত বিরহ বা মাথুর। বৈষ্ণব কবিদের অন্তরবীণায় এই মাথুরের বিরহ যেভাবে বেজে উঠেছে, জগতে তার তুলনা নেই। এই বিরহের মহাসমুদ্রের অপর পারে হলো সম্ভোগ অথবা মিলন। বিরহের তীব্রতার মধ্যেই মিলনের মাধুর্য্যের অপূর্ব্বতা।