পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

উপায় নেই। বিশ্বচরাচরের সব সংবাদের যিনি বিধাতা, এ সংবাদ এসেছে তাঁর কাছ থেকেই।

 ক্রমশঃ খুঁজতে খুঁজতে ব্রাহ্মণ সন্ধান পেলো জয়দেব গোস্বামীর। বিভিন্ন লোকের মুখ থেকে টুকরো টুকরো যে সব সংবাদ পেলো, তা একত্র করে জয়দেব গোস্বামীর চরিত্র যা দাঁড়ালো, সেই রূপলাবণ্যময়ী কন্যার ভবিষ্যৎ স্বামীরূপে তাকে কল্পনা করা ব্রাহ্মণের পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠলো।

 অধিকাংশ সম্ভ্রান্ত লোকই জয়দেবের পরিচয় জানেন না। নীচ জাতীয় লোকদের কাছ থেকেই তার পরিচয় পাওয়া গেল। কে তার বাবা, কে তার মা, কোন্ বংশের ছেলে, তা কেউ জানে না। চাল নেই, চুলো নেই, পথে ঘাটে, নদীর ধারে, গাছতলায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।

 ব্রাহ্মণের মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। থাকবার মত যার সামান্য কুঁড়েঘরও নেই, তার হাতে কন্যা তুলে দেবার জন্যে সে এই দীর্ঘ পথ এত কষ্ট স্বীকার করে এসেছে? হায় জগন্নাথ, এ কি তোমার খেয়াল?

 কন্যার ভবিষ্যৎ স্বামীর চরিত্র সম্বন্ধেও যে বিবরণ সংগ্রহ করলো, তা অনুরূপই ভয়াবহ। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে ভিখারী, কেউ বলে লম্পট। কেউ বলতে পারে না সঠিকভাবে কোথায় সে থাকে, বা কি করে। কিন্তু সকলের কথা থেকে যে কথাটি সুস্পষ্ট হয়ে’ ওঠে, তাহলো, পদ্মাবতীর স্বামী হবার পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত এই লোক। এই লোকের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দেওয়া আর কন্যাকে হাত-পা বেঁধে সমুদ্রের জলে ফেলে দেওয়া একই জিনিস, হয়ত সমুদ্রের জলে ফেলে দেওয়া অধিকতর শ্রেয়ঃ, কেন না সে-যন্ত্রণা এক নিমেষের। দুশ্চিন্তায় ব্রাহ্মণের আহার-নিদ্রা ঘুচে গেল।

সাত

 যার জন্যে এই দুশ্চিন্তা সে তখন অজয়ের ধারে, জনতা থেকে জনসমাজ থেকে দূরে একা একা ঘুরে বেড়ায়। কোন ঘর নেই তার, কোন ঘরের মায়া নেই তার। অজয়ের জলকল্লোলে শুষ্ক পাতায় কৃষ্ণ-নাম লিখে সে ভাসিয়ে দেয়। বনে বনে গাছের গায়ে গায়ে লেখে কৃষ্ণ-নাম। উন্মাদের মতন হাওয়ায়

[চৌদ্দ]