গীতগোবিন্দ
জয়দেব বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আসবে বলে!
ব্রাহ্মণ বলে, কে সে?
জয়দেব বলেন, সে না এলে, কি করে বলবো, কে সে? তাকে দেখবো বলেই তো অপেক্ষা করে আছি!
ব্রাহ্মণ ভাবে, এ উন্মাদের সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ নেই। হতাশ হয়ে ফিরে আসে ঘরে, পদ্মাবতীকে সব কথা জানায়।
পদ্মাবতী নীরবে শোনে। বলে, বাবা, আমি যাব তাঁর কাছে!
ব্রাহ্মণ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে কন্যার দিকে।
পদ্মাবতী নতমুখে বলে, তিনিই আমার স্বামী!
ব্রাহ্মণ সারারাত বিনিদ্র অবস্থায় ভাবে, একি বিশ্বনাথের খেয়াল! চাল নেই, চুলো নেই, গাছের তলায় যার আশ্রয়, কপর্দ্দকহীন, তার হাতে এই কন্যাকে কি করে তিনি সমর্পণ করবেন? এ বিসদৃশ মিলনের ফলে বিধাতার কি উদ্দেশ্যই বা সফল হবে? সমস্ত শুনে পদ্মাবতীই বা কি রকমে বলতে পারলো, ঐ উন্মাদই তার স্বামী?
ব্রাহ্মণ দুশ্চিন্তার কোন কূল-কিনারা পায় না।
নয়
সেইদিন রাত্রিতে জয়দেব অবসন্ন দেহে এক গাছতলায় যখন শুয়ে পড়ে ছিলেন, তখন স্বপ্নে শুনলেন, প্রিয়তমের নির্দ্দেশ। কে যেন তাঁর কাণে এসে বল্লো, ওগো ভক্ত, তোমার আকুল ডাকে সাড়া দেবার জন্যেই আমি এসেছি। অজয়ের কূলে কদম্বখণ্ডীর ঘাটে জলের তলায় আমি তোমার অপেক্ষায় আছি, সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসো আমাকে!
প্রভাত না হতেই জয়দেব অজয়ের তীর ধরে ছোটেন কদম্বখণ্ডীর ঘাটের দিকে। উন্মাদের মতন জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়েন। জলের ভেতর দুহাত বাড়িয়ে খোঁজেন, কোথায় আছে তাঁর ইষ্টদেবতার মূর্ত্তি।
বহুক্ষণ অজয়ের জলে অবগাহন-অনুসন্ধানের পর সহসা কিসে যেন হাত ঠেকে গেল! ডুব দিয়ে সজোরে সেই বস্তুকে আঁকড়ে ধরে টেনে তুল্লেন, দেখেন, রাধাশ্যামের যুগল মূর্ত্তি, তাঁর ইষ্টদেবতা। সেই রাধাশ্যামের যুগল মূর্ত্তিকে কোলে করে জয়দেব অজয়ের তীরে উন্মাদ নৃত্য করতে সুরু করে দিলেন।
[সতের]