পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

 শুভলগ্নে রাধাশ্যামের বিগ্রহের সামনে জয়দেব অন্তরের সম্রাজ্ঞীরূপে বরণ করে নিলেন পদ্মাবতীকে।

 নবপরিণীতার হাত ধরে বল্লেন, তুমি হবে আমার প্রেম-সাধনার সহায়। তোমার প্রেমের মধ্যে আমি যেন নতুন করে পাই আমার রাধাশ্যামের প্রেমকে। তোমার সেই প্রেমে আমি রচনা করবো রাধাশ্যামের অনন্ত প্রেম-লীলা! তুমি হবে আমার প্রেরণা, আমার শ্রীমতী!

দশ

 অজয়ের তটে রাধাশ্যামের মন্দিরে জয়দেব নবপরিণীতা বধূকে নিয়ে শুরু করেন এক অপরূপ প্রেম-সাধনা। সারাদিন চলে যায় রাধাশ্যামের অর্চ্চনায়, পদ্মাবতী সঙ্গীতে নৃত্যে নিত্য করে রাধাশ্যামের আরতি, নৃত্যে সঙ্গীতে ভরিয়ে রাখে স্বামীর অন্তর। জয়দেব রচনা করতে বসেন, শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দ কাব্য। এক একটী পদ রচনা করেন আর পদ্মাবতীকে পড়িয়ে শোনান। পদ্মাবতী আবার সঙ্গীতে সেই পদকে মুখর করে তুলে কবিকে শোনায়। সমস্ত জগৎ বাইরে পড়ে থাকে, কবি জয়দেব তাঁর নিজের মনে রচনা করেন নব-বৃন্দাবন, সেখানে অনুক্ষণ প্রেম-লীলা করে চলে রাধামাধব। অন্তরের সেই নিবিড় অনুভূতি ফুটে ওঠে লেখনীর মুখে। কৃষ্ণ-ধ্যান, কৃষ্ণ-জ্ঞান, কৃষ্ণ-চিন্তা, কৃষ্ণ-দর্শন, কৃষ্ণ-কথাতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে কবি জয়দেবের অন্তর। অজয়কে মনে হয় যমুনা বলে, অজয়ের কূলে প্রস্ফুটিত কদম্ব-বৃক্ষকে দেখে মনে পড়ে কেলিকদম্ব; সন্ধ্যারতির সময় পদ্মাবতী যখন সঙ্গীতে নৃত্যে নিজেকে নিবেদন করে রাধাশ্যামের বিগ্রহের কাছে, জয়দেবের চোখের সামনে ফুটে ওঠে, পদ্মাবতীকে আশ্রয় করে স্বয়ং শ্রীরাধিকা। আবেশে আবেগে কবি পদ্মাবতীর চরণে নিজেকে লুটিয়ে দিয়ে বলেন, হে দেবী, আমি তোমারই চরণচারণ-চক্রবর্ত্তী!

 এইভাবে এগিয়ে চলে শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দ কাব্য, রাধাকৃষ্ণের মিলন-বিরহ লীলা। চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে রাত কাটিয়ে সর্ব্ব-অঙ্গে নখক্ষত নিয়ে প্রভাতে এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণ-অভিমানিনী শ্রীমতীর কুঞ্জে। সারারাত প্রিয় আগমন প্রতীক্ষায় বিনিদ্র কেটে গিয়েছে শ্রীমতীর রাত্রি। প্রভাতে তাই কৃষ্ণ যখন এসে দাঁড়ালেন, শ্রীমতী দেখেন রাত্রির কেলি-উন্মত্ততায় শ্রীকৃষ্ণের পরণে রয়েছে পর-নায়িকার

[কুড়ি]