চিত্রে জয়দেব
অশ্রু-বিধৌতকণ্ঠে কবি পড়ে শোনান……জগতের সব প্রাণী যাঁকে চায়, তিনি আজ আকুল হয়ে চাইছেন আর একজনকে…নদী ছুটে আসে সাগরের বুকে, আজ সাগর ছুটে চলেছে নদীর কাছে।
“ওগো প্রিয়ে, দূর কর ঐ অকারণ মান। কথা বল, যে তোমার বুকের ভেতর রয়েছে, আলিঙ্গনে তাকে টেনে নাও বুকে।”
আবেগকম্পিতকণ্ঠে কবি পড়েন, স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং…অশ্রুতে রুদ্ধ হয়ে আসে কণ্ঠ, কবি আর পড়তে পারেন না।
পদ্মাবতী, পদ্মাবতী, কেমন করে আমার এই লেখনী দিয়ে লিখবো সে-কথা, বিশ্ব যার চরণে প্রণত, সে আজ চাইছে চরণ ধরতে…
উদ্বেল হয়ে ওঠে ভক্তের অন্তর। লেখনী ফেলে দিয়ে ওঠে পড়েন কবি।
বেলা দ্বিপ্রহর।
পদ্মাবতী বলে, প্রভু, দ্বিপ্রহর হয়ে গিয়েছে, আপনি স্নান সেরে আসুন। তারপর আহার আর বিশ্রামের পর আবার লিখতে চেষ্টা করবেন।…
কবির মনে পড়ে, তাই তো, পদ্মাবতীও অভুক্ত রয়েছেন। তাই নদীতে স্নানের জন্যে বেরিয়ে পড়লেন।
পদ্মাবতী আহারের আয়োজন করতে লাগলো। অল্পক্ষণ পরেই পদ্মাবতী দেখে, স্নান সেরে স্বামী ফিরে এসেছেন।
তাড়াতাড়ি আহারের আয়োজন করে। আহার-অন্তে জয়দেব বলেন, পদ্মাবতী, আমার পুঁথিটা নিয়ে এসো, অসমাপ্ত পদটী সমাপ্ত করে বিশ্রাম করবো।
পদ্মাবতী আনন্দে পুঁথি নিয়ে আসে। জয়দেব অসমাপ্ত পদটী সম্পূর্ণ করে লিখলেন,
স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং
দেহি পদপল্লবমুদারম্।
তারপর বিশ্রাম করবার জন্যে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন।
পদ্মাবতী স্বামীর ভুক্তাবশিষ্ট নিয়ে তখন নিজে খেতে বসলো।
এমন সময় দরজায় পদধ্বনি জেগে উঠলো।
পদ্মাবতী সবিস্ময়ে দেখে কৃষ্ণনাম গাইতে গাইতে স্নানান্তে বাইরে থেকে জয়দেব আসছেন!
[বাইশ]