গীতগোবিন্দ
বিস্ময়ে পদ্মাবতী হতবাক হয়ে যায়। এইমাত্র তো স্বামী স্নান সেরে আহার-অন্তে ঘরে বিশ্রাম করতে ঢুকলেন, কোথা থেকে আবার কি-ভাবে তিনি বাইরে থেকে এলেন?
জয়দেবও অবাক্ হয়ে গেলেন কারণ তিনি অভুক্ত থাকতে, পদ্মাবতী কি করে খেতে বসলো?
পদ্মাবতী ছুটে বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে দেখে, ঘরশূন্য, সমস্ত ঘর ভরে শুধু উঠছে পদ্মের আর চন্দনের সৌরভ।
উন্মাদিনীর মতন স্বামীর চরণ-প্রান্তে পড়ে বলে, প্রভু, ধন্য, ধন্য তুমি! তোমার স্পর্শে ধন্য আমিও!
বিস্ময়ে জয়দেব বিহ্বল হয়ে যান।
তখন তাড়াতাড়ি পদ্মাবতী শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দের পুঁথি এনে দেখে, স্পষ্ট অক্ষরে সেখানে লেখা রয়েছে সেই সমাপ্ত পদ, দেহি পদপল্লবমুদারম্!
পদ্মাবতী সমস্ত ঘটনা জয়দেবকে জানায়।
শুনতে শুনতে জয়দেবের সর্ব্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন, ভক্তবৎসল কৃষ্ণ ভক্তের মর্ম্ম-ব্যথা বুঝতে পেরে, নিজের হাতে লিখে গিয়েছেন, যেকথা লিখতে ভক্তের অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠেছিল।
অজয়ের তটে সেদিন মানুষের প্রেমের আকর্ষণে ভগবান্ সশরীরে এসেছিলেন নেমে, তার চিহ্ন রয়ে গেল নিত্যকালের জন্যে গীতগোবিন্দ কাব্যে। মানুষের তৈরী এই মহাকাব্যের ভেতরে তাই আছে অমানুষী দৈব প্রেমের স্পর্শ। তাই গীতগোবিন্দ হলো মানুষের হৃদয়ে দেবতার স্বাক্ষর। তাই কাব্য-সাহিত্যে গীতগোবিন্দের একটা বিশেষ স্বতন্ত্র সার্থকতা আছে।
[তেইশ]