চিত্রে জয়দেব
এগার
গীতগোবিন্দ লেখা শেষ হলে, রাধাশ্যামের মন্দিরে জয়দেব গান গেয়ে সেই সঙ্গীত তাঁর অন্তরের ঠাকুরকে প্রথম শুনিয়েছিলেন। সেদিন রাধাশ্যামের মন্দিরে দেশ-দেশান্তর থেকে লোক কবির যশোসৌরভে আকৃষ্ট হয়ে এসেছিল। সেই উৎসব-সভায় পদ্মাবতী সঙ্গীতে আর নৃত্যে স্বামীর কাব্যকে রূপ দিয়েছিলেন, জয়দেব নিজে মৃদঙ্গ বাজিয়ে সঙ্গত করেছিলেন।
সেদিনও বাংলাদেশে সঙ্গীত ও নৃত্যে বাংলার পুরনারীরা বাংলার শিল্পিক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল। তখন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল না, চারিদিকে ছিল একটা অক্ষুণ্ণ শান্তি। সমাজের মধ্যে ছিল না কোন বৃহৎ কর্ম্ম-প্রেরণা, কোন উৎকট দারিদ্র্যের অঙ্কুশাঘাত। তাই লোকে জীবনের স্বচ্ছন্দধারায় গা ঢেলে দিয়ে একমাত্র কাব্য, নৃত্য, সঙ্গীত আর নাট্যাভিনয়ের ভেতর জীবনের বিচিত্র স্বাদ উপভোগ করবার চেষ্টা করতো।
সমাজ যখন কর্ম্মে শক্তিতে ঐশ্বর্য্যে বিকশিত হয়ে ওঠে, তখন দেখা দেয় সেই সমাজে এক অভূতপূর্ব্ব কাব্য আর শিল্প-প্রতিভা; সমাজ যখন ধীরে ধীরে ভেতর থেকে নির্বীর্য্য হয়ে আসতে থাকে, তার সমস্ত কর্ম্ম-উৎসগুলো শুকিয়ে আসতে থাকে, তখন সেই অবনতির মুখে সমাজে আর একবার দেখা দেয় কাব্য আর সাহিত্য-প্রতিভার উন্মেষ, সমাজের যা কিছু অবশিষ্ট শক্তি তখন কাব্য আর রসানুভূতির মধ্যে খোঁজে আত্মপ্রকাশের পথ।
ঠিক এই অবস্থা তখন দাঁড়িয়েছিল বাংলার সমাজে। ধর্ম্মও তখন বিকৃত হয়ে সমাজের অধোগতিকে সংগোপনে সাহায্য করে চলেছিল। সেনরাজাদের আগে বাংলাদেশ ছিল পালরাজাদের শাসনে। পালরাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। তাই পাল-আমলে বৌদ্ধধর্ম্ম প্রসারের ফলে হিন্দুর আচার-ধর্ম্ম শুকিয়ে আসে। বৌদ্ধধর্ম্মও ক্রমশঃ অন্তঃসার-শূন্য হয়ে বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানের কঙ্কালে পরিণত হতে থাকে। তারপর সেন আমলে বল্লাল সেন আবার হিন্দুধর্ম্মকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেষ্টা করেন। যদিও বাংলার বাইরে থেকে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের নিয়ে বল্লাল সেন বৈদিক ধর্ম্মের পুনরুত্থানের চেষ্টা করেন কিন্তু তাঁর সে চেষ্টা সার্থক হয়নি।
বৌদ্ধধর্ম্মের সেই প্রতিক্রিয়া থেকে ভাঙ্গনধরা সমাজকে রক্ষা করে তার মধ্যে
[চব্বিশ]