পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গীতগোবিন্দ

নতুন ধর্ম্মোন্মাদনার জোয়ার আনার মত শক্তি বল্লাল সেন বা তাঁর পুত্রের ছিল না। সেকাজের জন্যে দরকার বিরাট পুরুষের, অবতার-পুরুষের। এবং সেই বহু-আকাঙ্ক্ষিত ধর্ম্মের উদার পুনরুত্থান নিয়ে এলেন পরবর্ত্তী যুগে শ্রীচৈতন্য। কবি জয়দেব তাঁর অপরূপ প্রেম-সাধনায় সেই মহাপুরুষেরই আবির্ভাব-পথকে তৈরী করে গেলেন। দেহ-সাধনার ব্যভিচারের মধ্য দিয়ে সমস্ত বাংলাদেশ দেহসর্ব্বস্ব যে অধোগতির পথে অগ্রসর হয়ে চলেছিল, কবি জয়দেব সেখানে দেহাতীত দিব্য প্রেমের আদর্শে সমাজের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুল্লেন।

বার

 কবি জয়দেবের খ্যাতি দেখতে দেখতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো।

 প্রত্যেক পূজাপার্ব্বণে জয়দেব পুণ্য-সলিলা গঙ্গায় স্নান করতে যেতেন। দীর্ঘ পথ তাঁকে পায়ে হেঁটে যেতে হতো আবার দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ফিরতে হতো।

 সেবার পৌষ-সংক্রান্তির পুণ্য দিবস সমাগত-প্রায়। জয়দেব প্রত্যেক বৎসর পৌষ-সংক্রান্তি-দিনে গঙ্গাস্নানের জন্যে যাত্রা করতেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেবার পৌষ-সংক্রান্তির আগের দিন শয্যাশায়ী হলেন। ভক্তের মনে নিদারুণ দুঃখ দেখা দিল। তাহলে কি এবার আর গঙ্গাস্নান হবে না? কাতরে গঙ্গাদেবীকে আহ্বান করেন এবং সারাদিন ধরে তাঁর স্তব করেন।

 পৌষ-সংক্রান্তির প্রভাতে কেন্দুবিল্ব গ্রামের লোকদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অবাক হয়ে তারা দেখে, অজয়ের দুই কূল উপছে এসেছে বন্যা, অজয়ের শাদা জলে এসে মিশেছে গঙ্গার গৈরিক জল। পূর্ব্ববাহিনী স্রোত আজ কোন্ রহস্যময়ের ইঙ্গিতে পশ্চিমমুখী হয়ে ছুটেছে।

 জয়দেব আনন্দে আত্মহারা হয়ে দেখেন, কদম্বখণ্ডীর ঘাটে বইছে গঙ্গার স্রোত-জল। উন্মাদের মতন সেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন, বলেন, অসীম করুণাময়ী মা, সন্তানের মিনতিতে আজ তুমি এলে বন্যারূপে তার কাছে। জয় মা পতিতপাবনী, মর্ত্ত্যসুরধুনী!

 কদম্বখণ্ডীর ঘাটে গঙ্গার আগমন, হয়ত কিম্বদন্তী কিন্তু এই কিম্বদন্তী থেকে বোঝা যায়, কি প্রগাঢ় ছিল কবি জয়দেবের ভক্তি! তাঁর জীবনের সমগ্র কাহিনী আমাদের জানা নেই কিন্তু এই সব কিম্বদন্তী থেকে তাঁর চরিত্রের যে

[পঁচিশ]