গীতগোবিন্দ
একান্ত দুঃখের বিষয়, বাংলার এই সব শ্রেষ্ঠ কবি-প্রতিভাদের দান আজ কালগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কবি উমাপতি ধর লক্ষ্মণ সেনের সভা-কবিদের মধ্যে সব চেয়ে বয়সে প্রবীণ ছিলেন। তিনি বল্লাল সেনের আমলের লোক এবং কিছুকাল তাঁর মন্ত্রিত্ব পর্য্যন্ত করেছেন। গোটাকতক টুকরো টুকরো কবিতা ছাড়া তাঁর সৃষ্টির আর কিছু পাওয়া যায় না। কবি জয়দেব তাঁর সমালোচনা করে বলেছিলেন, বাচঃ পল্লবয়ত্যুমাপতিধরঃ অর্থাৎ কবি উমাপতি ধরের একটা বিশেষ লক্ষণ ছিল যে, তিনি শব্দের ওপর বড় বেশী নজর দিতেন, তাঁর কাব্য-প্রতিভার লক্ষ্য ছিল, শব্দকে পল্লবিত করে তোলা।
লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় কবি-প্রতিভাতে যেমন কবি জয়দেবের স্থান ছিল অগ্রগণ্য, তেমনি তেজস্বিতায় এবং পাণ্ডিত্যে প্রধান স্থান ছিল গোবর্দ্ধন-আচার্য্যের। তাঁর নির্ভীকতার কতকগুলি গল্প প্রচলিত আছে। সেই সব গল্প থেকে বোঝা যায়, তখনও ব্রাহ্মণের তেজ, ন্যায়নিষ্ঠা, তাঁর সত্যবাদিতা রাজার আসনকে পর্য্যন্ত টলিয়ে দিতো। কবি জয়দেবের সমসাময়িক সমাজের চিত্রস্বরূপ গোবর্দ্ধন আচার্য্যের একটা কাহিনী বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
চৌদ্দ
সেকালের রীতি-অনুযায়ী রাজা লক্ষ্মণ সেনও বহুবল্লভ ছিলেন। তাঁর অনেকগুলি মহিষী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রিয়মহিষী ছিলেন বল্লভা। রাণী বল্লভার এক ভাই ছিল, নাম কুমারদত্ত।
কুমারদত্ত যেমন অত্যাচারী, তেমনি ছিল লম্পট। বহু বিধবার, বহু তরুণীর অভিশাপ সে জীবন ভরে কুড়িয়ে বেড়ায়। প্রিয়মহিষীর ভ্রাতা বলে, কেউ আর সাহস করে রাজদ্বারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারতো না। রাণী বল্লভা স্নেহান্ধ হয়ে এই দুর্বৃত্ত ভ্রাতার সমস্ত অপরাধকে ঢেকে রাখতেন।
কিন্তু একদিন বিপর্য্যয় কাণ্ড ঘটে গেল। কুমারদত্ত মাধবী নামে এক বণিকপত্নীর ওপর অত্যাচার করতে যায়। কিন্তু মাধবী জোর করে সেই দুর্বৃত্তের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় এবং চীৎকার করে লোকজনকে ডাকে। সেই চীৎকারে রাজপ্রহরীরা সেখানে এসে উপস্থিত হয়। মাধবী তাদের সামনে কুমারদত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কিন্তু রাজপ্রহরীরা
[সাতাশ]