চিত্রে জয়দেব
এসেছিল। বিদ্যুৎপ্রভার গান শুনে বিমুগ্ধ হয়ে সেই নারী কাঁখের কলসীর বদলে কোলের শিশুকে কূপের জলে অন্যমনস্কভাবে নামিয়ে দেয়।
বিদ্যুৎপ্রভার গান শেষ হলে গাইতে আরম্ভ করলেন বুঢ়ন মিশ্র……উড়িষ্যা থেকে নিমন্ত্রিত হয়ে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় এসেছেন, ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ গায়ক। বুঢ়নমিশ্র ধরলেন পটমঞ্জরী রাগ। গানের সুর আগুনের হল্কার মতন বাতাসে ভেসে বেড়ায়। গান শেষ হলে দেখা গেল, রাজসভার দ্বারে যে সব শোভা-বৃক্ষ ছিল, তার পাতা সব ঝরে গিয়েছে। রাজসভার মধ্যে ধন্য ধন্য রব উঠলো। সকলে একবাক্যে বলে উঠলেন, বাংলাদেশে এঁদের যোগ্য শিল্পী আর নেই, সুতরাং এঁদের দুজনকেই জয়পত্র দেওয়া উচিত।
সেই সময় পদ্মাবতী পথ দিয়ে স্নানে যাচ্ছিলেন, তিনি শুনলেন বাংলার বাইরে থেকে দুজন গায়ক এসে রাজার হাত থেকে জয়পত্র নিয়ে যাচ্ছেন। পদ্মাবতী রাজসভায় প্রবেশ করে রাজাকে শ্রদ্ধাসহকারে নমস্কার করে বল্লেন, রাজা, সর্ব্বশ্রেষ্ঠ গায়ক বা গায়িকার জন্যে আপনার জয়পত্র। বাংলাদেশে এদের চেয়ে যোগ্যতর গায়ক আছে!
সকলেই অবাক হয়ে পদ্মাবতীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
লক্ষ্মণ সেন জিজ্ঞাসা করেন, হে কল্যাণী, কে সে গায়ক বা গায়িকা?
তখন পদ্মাবতী বলেন, বাংলাদেশ থেকে জয়পত্র নিয়ে যেতে হলে আমি ও আমার স্বামী কবিশ্রেষ্ঠ জয়দেবকে সঙ্গীতে পরাজিত করতে হবে!
তখনি মহাসমাদরে রাজা পদ্মাবতীকে গানের আসরে আহ্বান করলেন। পদ্মাবতী গান্ধার রাগ ধরলেন। সেই সুরের আকর্ষণে গঙ্গার অপর তীর থেকে নৌকো সব এ-তীরে এসে লাগলো। তখন সভাসদেরা বল্লেন, পদ্মাবতীর সুরের মায়াই বেশী, কারণ সম্পূর্ণ নির্জীব নৌকোকে তা আকর্ষণ করে নিয়ে এসেছে। জয়পত্র পদ্মাবতীরই পাওয়া উচিত।
তাতে বুঢ়ন মিশ্র রেগে গিয়ে বল্লেন, স্ত্রীলোকের সঙ্গে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না।
ইতিমধ্যে রাজার আহ্বানে কবি-শ্রেষ্ঠ জয়দেব রাজসভায় উপস্থিত হলেন। সমস্ত ব্যাপার শুনে বল্লেন, বুঢ়ন মিশ্রের এমন কিছু কৃতিত্ব তো আমি দেখতে পাচ্ছি না, বসন্তকালে এমনিই তো গাছের পাতা ঝরে যায়।
[ত্রিশ]