পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

 শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দের এই প্রথম শ্লোক নিয়ে আজ পাঁচশো বছর ধরে কত না রসিকজন, কত না পণ্ডিত কত না বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন।

 কবি জয়দেব গীতগোবিন্দ কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের বাসন্তী রাস-লীলা বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে কোথা থেকে এলো এই বর্ষার চিত্র? কাব্যে আরম্ভেই কেন এই বর্ষার নিবিড় রাত্রির বর্ণনা? এবং তার মধ্যে কোথা থেকেই বা এলেন গোপ-রাজ নন্দ? নন্দই বা রাধাকে কেন আদেশ করছেন শ্রীকৃষ্ণকে গৃহে পৌঁছে দিতে?

 এই শ্লোক নিয়ে পূজ্যপাদ পূজারী গোস্বামী থেকে আরম্ভ করে বহু বৈষ্ণব আচার্য্য বহু ব্যাখ্যা করেছেন। তার ভেতর থেকে একটি ব্যাখ্যা মনে হয় সকল দিক থেকেই সমীচীন। তাই সেই ব্যাখ্যাই এখানে দেওয়া হলো।

 রাধাকৃষ্ণের প্রেম-লীলার কাব্য লিখতে বসে, পরম বৈষ্ণব জয়দেব স্বভাবতঃই রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম-লীলার গূঢ়-তত্ত্বের কথা ভেবেছিলেন। তিনি তাঁর কাব্যে যে অপরূপ প্রেম-লীলার বর্ণনা করবেন, সাধারণ মানুষ যেন মনে না করে যে, এই প্রেম সাধারণ মানুষের কাম-কেলি। রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম-লীলা অনন্ত প্রকৃতির সঙ্গে অনাদি পুরুষের নিত্য লীলা। তার বাইরের দিকটা হলো মানবীয়, তার ভেতরের দিকটা হলো আত্মিক। কাব্যের আরম্ভেই তাই বৈষ্ণব কবি সেই কথা পাঠক-পাঠিকাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান এবং সেইজন্যেই সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞ জয়দেব ব্রহ্মবৈবর্ত্ত-পুরাণে যেখানে রাধা-কৃষ্ণের এই অতিমানবীয়তার স্বরূপকে উদ্ঘাটিত করা হয়েছে, সেই কাহিনীকে অবলম্বন করেই এই শ্লোক রচনা করেছেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত-পুরাণের ১৫ অধ্যায়ে রাধা-কৃষ্ণের আসল পরিচয় কি, তাঁদের আসল সম্পর্ক কি, তার কাহিনী বলা হয়েছে এবং গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোকের বর্ষা-বর্ণনা, নন্দ-নির্দ্দেশ, সমস্তই সেখানে দেখতে পাওয়া যায়।

 কাহিনীটি হলো এই,

 একদিন গোপরাজ নন্দ বালক কৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে ভাণ্ডীরবনে গরু চরাতে বেরিয়েছিলেন। বালক কৃষ্ণকে তিনি একদণ্ড কাছ-ছাড়া করতে পারতেন না। গোচারণ করতে করতে ক্লান্ত হ’য়ে নন্দ বালক শ্রীকৃষ্ণকে নিজের হাতে খাওয়ালেন এবং গাছের তলায় বিশ্রামের জন্যে শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করতে লাগলেন। সেই সময় চিরকিশোর শ্রীকৃষ্ণরূপী নারায়ণ নন্দকে তাঁর আসল বিভূতি দেখাবার

[ছত্রিশ]