পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গীতগোবিন্দ

সঙ্কল্প করলেন। তিনি বাইরে বালকরূপী হলেও, তিনি চিরকিশোর; তিনি মানবদেহ ধারণ করেছেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং সেই বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্যেই তিনি বৃন্দাবনে প্রেম-লীলা করবেন, এই কথা তিনি নন্দকে বোঝাতে চাইলেন। সেইজন্যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মায়া-প্রভাবে হঠাৎ আকাশে বর্ষার ঘন মেঘের উদয় করালেন, দেখতে দেখতে বনভূমি ঘোর অন্ধকার হ’য়ে গেল, আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে উঠলো, ঘন ঘন বজ্রের শব্দে অরণ্য চকিত হয়ে উঠলো। প্রবল ধারায় বৃষ্টি পড়তে সুরু হয়ে গেল। তখন নন্দরাজ ভীত হয়ে উঠলেন, একদিকে বর্ষা-সন্ত্রস্ত সমস্ত গাভী, আর একদিকে বালক শ্রীকৃষ্ণ। কোন্ দিক তিনি সামলাবেন? শ্রীকৃষ্ণ তখন মায়ার খেলাকে দৃঢ় করবার জন্যে বালকের মতন ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে নন্দের কণ্ঠ আঁকড়ে ধরলেন। নন্দ ভীত আর্ত্ত অসহায় হ’য়ে মনে মনে জগদম্বাকে ডাকতে লাগলেন।

 এমন সময় নন্দ দেখেন, সেইদিকে শ্রীমতী রাধা এগিয়ে আসছেন। হঠাৎ সেই নির্জ্জন বনে, সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার মধ্যে রাধার এই অকস্মাৎ আগমনে নন্দ উল্লসিত হয়ে উঠলেন। সেই সময় নন্দের মনে মহামুনি গর্গের কথা উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। একদা মহামুনি গর্গ বলেছিলেন, শ্রীমতী রাধা হলেন স্বয়ং নারায়ণী, লক্ষ্মীস্বরূপা এবং বালক শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নারায়ণ।

 সেই কথা মনে উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নন্দ ক্রন্দন-পরায়ণ ভয়-ভীত শ্রীকৃষ্ণকে রাধার নিকটে দিয়ে বল্লেন, আমি বুঝতে পেরেছি দেবী, তুমি নারায়ণী…তাই তোমার হাতেই তোমার প্রিয়-ধনকে সমর্পণ করলাম…তুমি নির্ব্বিঘ্নে শ্রীকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে যাও।