পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

 এই শ্লোকে জয়দেব তাঁর সতীর্থ আর চারজন কবির কথা উল্লেখ করে বলছেন, যে, তাঁরা প্রত্যেকেই কাব্যের এক একটা দিককেই প্রধানতঃ অবলম্বন করে কাব্য লিখেছেন। উমাপতিধরের বিশেষত্ব হলো, শুধু শব্দের মিষ্টতার দিকে, অনুপ্রাস ও অন্যান্য অলঙ্কারের সাহায্যে তিনি সর্ব্বদাই চেষ্টা করেন শ্রুতিমনোহর বাক্য রচনা করতে কিন্তু তাতে করে কাব্যের অন্য গুণগুলো তাঁর কবিতায় কম থাকে। শরণ কবির বিশেষত্ব হলো, তিনি দুরূহ বিষয় নিয়ে অতি দ্রুত লিখতে পারেন। কিন্তু তাতে তো কাব্যের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না। তেমনি আচার্য্য গোবর্দ্ধনের গুণ হলো, তিনি শৃঙ্গার অর্থাৎ প্রেমরস নিয়ে কাব্য লেখেন এবং কি করে পরিমিত কথায় প্রেম-রসকে দূষিত না করে কাব্য লেখা যায়, তা তিনি জানেন। কিন্তু তার ফলে তাঁর রচনায় শব্দের ঝঙ্কার আর লালিত্য তেমন ফুটে ওঠে না। ধোয়ী কবির গুণ হলো, তিনি শ্রুতিধর অর্থাৎ যা একবার কাণে শুনবেন, তৎক্ষণাৎ তা লিখতে পারেন। কিন্তু তাতে মৌলিকতা থাকে না। সেইজন্যে জয়দেব বলছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সেই সব খণ্ড খণ্ড বৈশিষ্ট্য তাঁর এই কাব্য-রচনায় তিনি একত্রিত করেছেন, যার ফলে এই কাব্য সকল দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ও শুদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর এই কাব্য যেমন শৃঙ্গার-রস-প্রধান, তিনি তেমনি চেষ্টা করেছেন পরিমিত কথার ভেতর দিয়ে বিশুদ্ধ প্রেমরসকে পরিবেশন করতে এবং তার জন্যে শব্দের মাধুর্য্য বা লালিত্য কোথাও হানি হতে দেননি, বা নিজের মৌলিকতাকেও ক্ষুণ্ণ করেন নি। কবি জয়দেবের এই উক্তি যে নিছক কবি-দম্ভ নয়, তার সাক্ষী গীতগোবিন্দের প্রত্যেকটি শ্লোক । এমন মধুর শব্দ-ঝঙ্কার, অল্প কথার মধ্যে এমন ব্যঞ্জনা, জগতের সাহিত্যে দুর্লভ।