পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হংকং।
৯৫

 সকল জাতিরই জাপানের দিকে টান। এমন কি একটা বৃদ্ধ ফরাসী সওদাগরেরও দেখলাম জাপানের প্রতি সহানুভূতি। তিনি অতি সরলভাবে ব’লতেন,—“যেমন একটা বড় লোকের সঙ্গে একটি ছোট ছেলের কুস্তী হ’লে সকলেরই ছেলেটার দিকে টান হয়, তেমনি সকল লোকেরই জাপানের জন্য সহানুভূতি স্বাভাবিক। তবে জাপান যখন বড় বড় যুদ্ধে জিতবে, তখন আবার অনেক ইউরোপীয়ানের চোখ টাটাবে। এসিয়াবাসীর কাছে ইউরোপের পরাস্ত হওয়া বড় অপমানের কথা। বিজিত অন্যান্য এসিয়াবাসীর তাতে চোখ ফুটুবে। ইংলণ্ডের জাপানপক্ষ সমর্থন কেবল মৌখিক মাত্র। স্বার্থ আছে ব’লেই ইংলণ্ড এরূপ করিতেছে। জাপানের দুর্দ্দিনে ইংলণ্ড কখনও সাহায্যার্থ অগ্রসর হবে না। জাপান হারিলে জাপানের অস্তিত্বই লোপ পাইবে। আর এখন জাপান যতই জিতুক, শেষে তাকে হারিতেই হ'বে -যদি রুষিয়ায় ঘরোয়া গোলমাল না বাধে।”[১]

 প্রতি বন্দরেই জাহাজের জন্য সংবাদ পত্র লওয়া হইত,তাহা হইতে যুদ্ধের অনেক খবর পাইতাম। এইতো ভীষণ চীন সমুদ্র, জাপানের দিকে আরও ভীষণতর। টর্পেডোর আঘাতে ও গোলার চোটে যখন জাহাজগুলি চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া সমুদ্রগর্ভে প্রবেশ করে, তখন কত শত লোক এক নিমেষের মধ্যে বিনষ্ট হয়। ডুবে মরা, পুড়ে মরা, বম্ব-সেলের আঘাতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খণ্ড বিখণ্ড হ’য়ে মরা, কি ভীষণযন্ত্রণাদায়ক! ঐরূপ ব্যাপারই সেখানে দিবানিশি ঘটিতেছে; আত্মীয়-


  1. এই প্রবন্ধ লেখার পর রুষ-জাপান যুদ্ধ থামিয়াছে। মার্কিন রাজ্যর প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্টের আন্তরিক চেষ্টায় উভয় জাতির মধ্যে সন্ধি-বন্ধন হইয়াছে। এই যুদ্ধে জাপান পৃথিবীতে কিরূপ গৌরব,কিরূপ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন,তাহা কাহারও অবিদিত নাই। রুষিয়ার ঘরোয়া-বিবাদ এখনও মিটে নাই। এ গ্রন্থে সে সব কাহিণী বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে।—লেখক।