পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের হসন্ত হলন্ত
৮১

 যাকে আমি অসম বা বিষমমাত্রার ছন্দ বলি যুক্তধ্বনির বাছবিচার তাদেরই এলাকায়।

হৃৎ-ঘটে সুধারস ভরি

কিংবা

হৃৎ-ঘটে অমৃতরস ভরি
তৃষা মোর হরিলে সুন্দরী।

এ ছন্দে দুইই চলবে। কিন্তু

অমৃতনির্ঝরে হৃৎপাত্রটি ভরি
কারে সমর্পণ করিলে সুন্দরী।

অগ্রাহ্য, অন্তত আধুনিক কালের কানে। অসমমাত্রার ছন্দে এরকম যুক্তধ্বনির বন্ধুরতা আবার একদিন ফিরে আসতেও পারে, কিন্তু আজ এটার চল নেই।

 এই উপলক্ষ্যে একটা কথা বলে রাখি, সেটা আইনের কথা নয়, কানের অভিরুচির কথা।

হৃৎপটে আঁকা ছবিখানি

ব্যবহার করা আমার পক্ষে সহজ, কিন্তু

হৃৎপত্রে আঁকা ছবিখানি

অল্প একটু বাধে। তার কারণ খণ্ড ৎ-কে পূর্ণ ত-এর জাতে তুলতে হলে তার পূর্ববর্তী স্বরবর্ণকে দীর্ঘ করতে হয়; এই চুরিটুকুতে পীড়াবোধ হয় না যদি পরবর্তী স্বরটা হ্রস্ব থাকে। কিন্তু পরবর্তী স্বরটাও যদি দীর্ঘ হয় তাহলে শব্দটার পায়াভারি হয়ে পড়ে।

হৃৎপত্রে এঁকেছি ছবিখানি

আমি সহজে মঞ্জুর করি, কারণ এখানে ‘হৃৎ’ শব্দের স্বরটি ছোটো ও ‘পত্র’ শব্দের স্বরটি বড়ো। রসনা ‘হৃৎ’ শব্দ দ্রুত পেরিয়ে ‘পত্র’ শব্দে পুরো ঝোঁক দিতে পারে। এই কারণেই ‘দিক্‌সীমা’ শব্দকে চারমাত্রার