২
উপরের প্রবন্ধে লিখেছি ‘আঁধার রজনী পোহাল’ গানটি নয়মাত্রার ছন্দে রচিত। ছন্দতত্ত্বে প্রবীণ অমূল্যবাবু ওর নয়-মাত্রিকতার দাবি একেবারে নামঞ্জুর করে দিলেন।[১] আর কারো হাত থেকে এ রায় এলে তাকে আপিল করবার যোগ্য বলেও গণ্য করতুম না, এ-ক্ষেত্রে ধাঁধা লাগিয়ে দিলে। রাস্তার লোক এসে যদি আমাকে বলে তোমার হাতে পাঁচটা আঙুল নেই তাহলে মনে উদ্বেগের কোনো কারণ ঘটে না। কিন্তু শারীরতত্ত্ববিদ এসে যদি এই সংবাদটা জানিয়ে যান তাহলে দশবার করে নিজের আঙুল গুনে দেখি, মনে ভয় হয় অঙ্ক বুঝি ভুলে গেছি। অবশেষে নিতান্ত হতাশ হয়ে স্থির করি, যে-কটাকে এতদিন আঙুল বলে নিশ্চিন্ত ছিলুম বৈজ্ঞানিক মতে তার সব-কটা আঙুলই নয়; হয়তো শাস্ত্রবিচারে জানা যাবে যে, আমার আঙুল আছে মাত্র তিনটি, বাকি দুটো বুড়ো আঙুল আর কড়ে আঙুল, তারা হরিজনশ্রেণীয়।
বর্তমান তর্কে আমার মনে সেইরকম উদ্বেগ জন্মেছে। ‘আঁধার রজনী পোহাল’ চরণের মাত্রাসংখ্যা যেদিক্ থেকে যেমন করে গনে দেখি নয়মাত্রায় গিয়ে ঠেকে। অমূল্যবাবু বললেন এটা তো নয়মাত্রার ছন্দ নয়ই, বাংলাভাষায় আজো নয়মাত্রার উদ্ভব হয়নি, হয়তো নিরবধিকালে কোনো এক সময়ে হতেও পারে। তিনি বলেন বাংলা ছন্দ দশমাত্রাকে মেনেছে, নয়মাত্রাকে মানেনি। এ-কথায় আরো আমার ধাঁধা লাগল।
অমুল্যবাবু পরীক্ষা করে বলছেন এ ছন্দে জোড়ের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ‘আঁধার রজনী’ পর্যন্ত এক পর্ব, এইখানে একটা ফাঁক, তারপরে
- ↑ অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়— নয় মাত্রার ছন্দ: পরিচয়, ১৩৪০ কার্তিক।