পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
ছন্দ

দু-জায়গায়, প্রথম আট ধ্বনিমাত্রার পরে ও শেষার্ধের ছয় ধ্বনিমাত্রা ও দুই যতিমাত্রার শেষে। পৃথিবীর প্রদক্ষিণ-ছন্দের মধ্যেও দুইভাগ আছে, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন। যতিসমেত ষোলমাত্রা পয়ারেও তেমনি আছে ঊত্তরভাগ ও দক্ষিণভাগ, কিন্তু সেই দুটিভাগ সমগ্রেরই অন্তর্গত।

মহাভারতের বাণী
অমৃতসমান মানি,
কাশীরাম দাস ভনে
শোনে তাহা সর্বজনে।

যদিও পয়ারের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ তবু একে অন্য ছন্দ বলব, কারণ এর পুনরাবর্তন আটমাত্রায়, ষোলমাত্রায় নয়।

আঁধার রজনী পোহাল,
জগৎ পুরিল পুলকে।

এই ছন্দের আবর্তন ছয়মাত্রার পর্যায়ে ঘটে না, তার কক্ষপথ সম্পূর্ণ হয়েছে নয়মাত্রায়। নয়মাত্রায় তার প্রদক্ষিণ নিজেকে বারে বারে বহুগুণিত করছে। এই নয়মাত্রায় মাঝে মাঝে সমভাগে জোড়ের বিচ্ছেদ আছে। সেই জোড় ছয় মাত্রায় না, তিন মাত্রায়।

 এই ছন্দের লক্ষণ কী। প্রশ্নের উত্তর এই যে, এর পূর্ণভাগ নয়মাত্রা নিয়ে, আংশিক ভাগ তিন, এবং সেই প্রত্যেক ভাগের মাত্রাসংখ্যা তিন। কোনো পাঠক যদি ছয়মাত্রার পরে এসে হাঁফ ছাড়েন, তাঁকে বাধা দেবার কোনো দণ্ডবিধি নেই; সুতরাং সেটা তিনি নিজের স্বচ্ছন্দেই করবেন, আমার ছন্দে করবেন না। আমার ছন্দের লক্ষণ এই— প্রত্যেক পদে তিন কলা,[১] প্রত্যেক কলায় তিনমাত্রা, অতএব সমগ্র পদের মাত্রাসমষ্টি নয়। অমুল্যবাবু এটিকে নিয়ে যে ছন্দ

  1. ‘উপপর্ব’ অর্থে ব্যবহৃত। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রমতে ‘কলা’ শব্দের মানে ‘মাত্রা’, অর্থাৎ ‘কলা’ ও ‘মাত্রা’ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।