পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
ছন্দ

এটা নয়মাত্রার শ্রেণীর ছন্দ; এর দুই কলা এবং কলাগুলি ত্রৈমাত্রিক। এর পদকে তিন কলায় ভাগ করে কলাগুলিকে দুই মাত্রার ছাঁদ দিলে এই একই ছড়া সম্পূর্ণ নূতন ছন্দে গিয়ে পৌঁছাবে। যথা—

  
বারে বারে | যায় চলি- | য়া
ভাসায় গো | আঁখিনীরে | সে।
বিরহের | ছলে ছলি- | য়া
মিলনের | লাগি ফিরে | সে।
সারাদিন | দহে তিয়া- | ষা,
বারেক না| দেখি উহা- | রে।
অসময়ে | লয়ে কী আ- | শা
অকারণে | আসে দুয়া- | রে।

অমূল্যবাবু বলেন এর প্রথম দুই কলায় চার চার আট এবং শেষেক কলায় একমাত্রার ছন্দ কৃত্রিম শুনতে হয়। বোধ হয় অখণ্ড শব্দকে খণ্ডিত করা হচ্ছে বলে তাঁর কাছে এটা কৃত্রিম ঠেকছে। কিন্তু ছন্দের ঝোঁকে অখণ্ড শব্দকে দুভাগ করার দৃষ্টান্ত অনেক আছে। এরকম তর্কে বিশুদ্ধ হাঁ এবং না-এর দ্বন্দ্ব, কোনো পক্ষে কোনো যুক্তিপ্রয়োগের ফাঁক নেই। আমি বলছি কৃত্রিম শোনায় না, তিনি বলছেন শোনায়। আমি এখনো বলি, এই রকম কলাভাগে এই ছন্দে একটি নূতন নৃত্যভঙ্গি জেগে ওঠে, তার একটা রস আছে।

 দশের বেশি মাত্রাভার বাংলা ছন্দ বহন করতে অক্ষম একথা মানতে পারব না। নিম্নে বারমাত্রার একটি শ্লোক দেওয়া গেল।

মেঘ ডাকে গম্ভীর গরজনে
ছায়া নামে তমালের বনে বনে
ঝিল্লি ঝনকে নীপ-বীথিকায়।