ভাবকে কথাকে ছন্দের মধ্যে জাগিয়ে তুললেই তা কবিতা হয়। সেই ছন্দ থেকে ছাড়িয়ে নিলেই সে হয় সংবাদ; সেই সংবাদে প্রাণ নেই, নিত্যতা নেই।
মেঘদূতের কথা ভেবে দেখ। মনিব একজন চাকরকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে, গদ্যে এই খবরের মতো এমন খবর তো সর্বদা শুনছি। কেবল তফাত এই যে, রামগিরি-অলকার বদলে হয়তো আমরা আধুনিক রামপুরহাট-হাটখোলার নাম পাচ্ছি। কিন্তু মেঘদূত কেন লোকে বছর বছর ধরে পড়ছে। কারণ মেঘদূতের মন্দাক্রান্তা ছন্দের মধ্যে বিশ্বের গতি নৃত্য করছে। তাই এই কাব্য চিরকালের সজীব বস্তু। গতিচাঞ্চল্যের ভিতরকার কথা হচ্ছে ‘আমি আছি’ এই সত্যটির বিচিত্র অনুভূতি। ‘আমি আছি’ এই অনুভূতিটা তো বদ্ধ নয়, এ যে সহস্ররূপে চলায়-ফেরায় আপনাকে জানা। যতদিন পর্যন্ত আমার সত্তা স্পন্দিত, নন্দিত হচ্ছে, ততদিন ‘আমি-আছি’র বেগের সঙ্গে সৃষ্টির সকল বস্তু বলছে “তুমি যেমন আছ, আমিও তেমনি আছি”। ‘আমি আছি’ এই সত্যটি কেবলি প্রকাশিত হচ্ছে ‘আমি-চলছি’র দ্বারা। চলাটি যখন বাধাহীন হয়, চারদিকের সঙ্গে যখন সুসংগত হয়, সুন্দর হয়, তখনি আনন্দ। ছন্দোময় চলমানতার মধ্যেই সত্যের আনন্দরূপ। আর্টে কাব্যে গানে প্রকাশের সেই আনন্দমূর্তি ছন্দের দ্বারা ব্যক্ত হয়।
একদা ছিল না ছাপাখানা; অক্ষরের ব্যবহার হয় ছিল না, নয় ছিল অথচ মানুষ যেসব কথা সকলকে জানাবার যোগ্য মনে করেছে দলের প্রতি শ্রদ্ধায়, তাকে বেঁধে রাখতে চেয়েছে এবং চালিয়ে দিতে চেয়েছে পরস্পরের কাছে।
একশ্রেণীর কথা ছিল যেগুলো সামাজিক উপদেশ। আর ছিল চাষবাসের পরামর্শ, শুভ-অশুভের লক্ষণ, লগ্নের ভালোমন্দ ফল। এইসমস্ত পরীক্ষিত এবং কল্পিত কথাগুলোকে সংক্ষেপ করে বলতে হয়েছে,