বকুলকুঞ্জে রচে সে প্রাণের
মুগ্ধ প্রলাপ; উল্লাস ভাসে
চামেলিগন্ধে পূর্ব গগনে।
পয়ার ছন্দের মতো এর গতি সিধে নয়। এই তিনমাত্রার এবং জোড়-বিজোড় মাত্রার ছন্দে পদক্ষেপ মাঘনৈষধের নায়িকাদের মতো মরালগমনে, ডাইনে-বাঁয়ে ঝোঁকে-ঝোঁকে হেলতে দুলতে।[১]
এবার যে-ছন্দের নমুনা দেব সেটা তিন-দুই মাত্রার, গানের ভাষায় ঝাঁপতাল-জাতীয়।
চিত্ত আজি দুঃখদোলে
আন্দোলিত। দূরের সুর
বক্ষে লাগে। অঙ্গনের
সম্মুখেতে পান্থ মম
ক্লান্তপদে গিয়েছে চলি
দিগন্তরে। বিরহবেণু
ধ্বনিছে তাই মন্দবায়ে।
ছন্দে তারি কুন্দফুল
ঝরিছে কত, চঞ্চলিয়া
কাঁপিছে কাশগুচ্ছশিখা।
এ-ছন্দ পাঁচ মাত্রার মাঝখানে ভাগ করে থামতে পারে না; যতিস্থাপনায় বৈচিত্র্যের যথেষ্ট স্বাধীনতা নেই।
এবার দেখানো যাক তিন-চার মাত্রার ছন্দ।
মালতী সারাবেলা ঝরিছে রহি রহি
কেন যে বুঝি না তো। হায় রে উদাসিনী,
পথের ধূলিরে কি করিলি অকারণে
মরণসহচরী। অরুণ-গগনের
ছিলি তো সোহাগিনী। শ্রাবণ-বরিষনে
মুখর বনভূমি তোমারি গন্ধের
গর্ব প্রচারিছে সিক্ত সমীরণে
- ↑ দ্রষ্টব্য ৭১ ও ১১৯ পৃষ্ঠা।