পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
ছন্দ

যে, যে-ছন্দগুলি বাংলার প্রাকৃত ছন্দ, অক্ষর গণনা করে তাদের মাত্রা নয়। বাঙালি সেটা বরাবর নিজের কানের[১] সাহায্যে উচ্চারণ করে এসেছে। যথা—

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল- বা- ন,
শিবু ঠাকুরের বিয়ে- হবে- তিন কন্যে দা- ন।

আক্ষরিক মাত্রা গুনতি করে একে যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে নিখুঁত পাঠান্তরটা দাঁড়াবে এই রকম:

বৃষ্টি পড়ছে টাপুর টুপুর নদেয় আসছে বন্যা,
শিবু ঠাকুরের বিবাহ হচ্‌ছে দান হবে তিন কন্যা।

রামপ্রসাদের একটি গান আছে:

মা আমার ঘুরাবি কত
যেন | চোখ-বাঁধা বলদের মতো।

এটাকে যদি সংশোধিত মাত্রায় কেতাদুরস্ত করে লিখতে চাও তাহলে তার নমুনা একটা দেওয়া যাক।

হে মাতা আমারে ঘুরাবি কতই
চক্ষু-বদ্ধ বৃষের মতোই।[২]

 একটা কথা তোমাকে মনে রাখতে হবে, বাঙালি আবৃত্তিকার সাধুভাষাপ্রচলিত ছন্দেও নিজের উচ্চারণসম্মত মাত্রা রাখেনি বলে ছন্দের অনুরোধে হ্রস্বদীর্ঘের সহজ নিয়মের সঙ্গে রফানিষ্পত্তি করে চলেছে। যথা—

মহাভারতের কথা অমৃত সমান,
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান্।

উচ্চারণ-অনুসারে ‘মহাভারতের কথা’ লিখতে হয় ‘মহাভারতের্কথা’, তেমনি ‘কাশীরাম দাস কহে’ লেখা উচিত ‘কাশীরাম দাস্কহে’।[৩] কারণ

  1. দ্রষ্টব্য পৃ ১৯০ পাদটীকা ২।
  2. বাংলা প্রাকৃত ছন্দের এই উচ্চারণ-বৈশিষ্টোর বিষয় এইসব দৃষ্টান্তযোগেই ৬২-৬৩ পৃষ্ঠার বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। অন্যত্রও এ-প্রসঙ্গের আলোচনা আছে: পৃ ১৪৩।
  3. দ্রষ্টব্য পৃ ১৭১ পাদটীকা ৩।