পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
২০৩

ধুর্জটীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা

 যখন কবিতাগুলি[১] পড়বে তখন পূর্বাভ্যাস মতো মনে কোরো না ওগুলো পদ্য। অনেকে সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে রুষ্ট হয়ে ওঠে। গদ্যের প্রতি গদ্যের সম্মানরক্ষা করে চলা উচিত। পুরুষকে সুন্দরী রমণীর মতো ব্যবহার করলে তার মর্যাদাহানি হয়। পুরুষেরও সৌন্দর্য আছে, সে মেয়ের সৌন্দর্য নয়— এই সহজ কথাটা বলবার প্রয়াস পেয়েছি পরবর্তী পাতাগুলিতে।

 ১৩৩৯ আশ্বিন ২৬

 ‘পুনশ্চ’র কবিতাগুলোকে কোন্ সংজ্ঞা দেবে। পদ্য নয়, কারণ পদ নেই। গদ্য বললে অতিব্যাপ্তি দোষ ঘটে। পক্ষিরাজ ঘোড়াকে পাখি বলবে, না ঘোড়া বলবে? গদ্যের পাখা উঠেছে একথা যদি বলি, তবে শত্রুপক্ষ বলে বসবে, ‘পিঁপিড়ার পাখা ওঠে মরিবার তরে’। জলে স্থলে যে সাহিত্য বিভক্ত, সেই সাহিত্যে এ-জিনিসটা জল নয়, তাই বলে মাটিও নয়। তাহলে খনিজ বলতে দোষ আছে কি। সোনা বলতে পারি এমন অহংকার যদি বা মনে থাকে মুখে বলবার সাহস নেই। না হয় তাঁবাই হল। অর্থাৎ এমন কোনো ধাতু যাতে মূর্তিগড়ার কাজ চলে। গদাধরের মূর্তিও হতে পারে, তিলোত্তমারও হয়। অর্থাৎ রূপরসাত্মক গদ্য, অর্থভারবহ গদ্য নয়। তৈজস গদ্য।

 সংজ্ঞা পরে হবে, আপাতত প্রশ্ন এই— ওতে চেহারা গড়ে উঠেছে কিনা। যদি উঠে থাকে তাহলেই হল।

 ১৩৩৯ কার্তিক ৭
  1. এই পংক্তি কয়টি ‘পুনশ্চ’ কাব্যের উপহৃত কপিতে লিখিত।