ভাষণ
ছন্দবিচার
সব ছন্দের unitগুলো আকারে সমান নয়।... কিন্তু একসময়ে বাংলায় সব unitকেই সমান মূল্য দেওয়া হত; যুগ্ম-অযুগ্ম ধ্বনির পার্থক্য স্বীকার করা হত না। কিন্তু তিন unitএর ছন্দে, যাকে আমি বলেছি অসম ছন্দ, তাতে যুগ্মধ্বনিকে এক unit ধরলে ভারি খারাপ শোনায়। এইটে অনুভব করেই তখনকার দিনে কবিরা এ-জাতীয় যুক্ত-অক্ষর যথাসম্ভব বর্জন করে চলতেন। যুক্ত-অক্ষর সম্পূর্ণ বর্জন করে একটি কবিতা রচনা করতে পারলে আত্মপ্রসাদ লাভ করতেন; মনে করতেন কবিতাটি খুব প্রাঞ্জল, সরল ও শ্রুতিমধুর হল। কবি বিহারীলালের কাছে আমার প্রথম শিক্ষা। তাঁর রচনাতেও যুক্তাক্ষর বড়ো কম।[১] আমারও বাল্যকালের রচনায় যুক্তাক্ষর খুব কম; তবু মাঝে মাঝে যুক্তাক্ষর ব্যবহৃত হয়ে ছন্দকে বন্ধুর করে তুলেছে। ‘রাহুর প্রেম’ কবিতাটিতেই তার নিদর্শন পাবে।[২] তখনও আমি যুগ্মধ্বনিকে দুমাত্র। বলে ধরতে আরম্ভ করিনি; কারণ খারাপ শোনালেও তখনকার দিনে জবাবদিহি ছিল না। কিন্তু ‘মানসী’র সময় থেকে আমি যুগ্মধ্বনিকে দুমাত্রা বলে ধরতে শুরু করেছি।[৩] ...
‘মানসী’র সময় থেকে আমি অসমমাত্রার ছন্দে যুগ্মধ্বনিকে দুমাত্রার value দিয়ে আসছি এবং বাংলা সাহিত্যে এই রীতিটাই চলে গেছে। আজকাল আর কোনো কবি অসমমাত্রার ছন্দে যুগ্মধ্বনিকে এক unit বলে চালাতে সাহস করেন না, আর করলেও তাঁকে কেউ ক্ষমা করবে না। কিন্তু আমি নিজেও একটিমাত্র রচনায় এরকম করেছি। যথা—
প্রভু বুদ্ধ লাগি আমি ভিক্ষা মাগি
ওগো পুরবাসী কে রয়েছ জাগি।