প্রাকৃতবর্গীয় ছন্দে প্রবহমানতার বিষয় অন্য প্রসঙ্গে আলোচিত হল। দ্রষ্টব্য ‘অসমমাত্রার ছন্দ’।
ত্রিপদী (পৃ ১২)—ষে ছন্দোবন্ধের প্রতিপংক্তিতে পদসংখ্যা অর্থাৎ অধর্যতির বিভাগসংখ্যা তিন, তাকেই বলা যায় ত্রিপদী। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন পয়ার-চৌপদীর ন্যায় ত্রিপদীও দুইবর্গ-মাত্রার ছন্দ (পৃ ১২), অর্থাৎ দুইমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ। বস্তুত অসম- এবং বিষম-পর্বিক ছন্দেও দ্বিপদী ত্রিপদী চৌপদী সবই হতে পারে। অসম- ও বিষম-পর্বিক দ্বিপদী প্রভৃতি একমাত্র কলাগোনা পদ্ধতিতেই রচিত হয়। কিন্তু সমপর্বিক দ্বিপদী প্রভৃতি বন্ধ কলাগোনা, অক্ষরগোনা ও সিলেব্ল্গোনা এই তিন পদ্ধতিতেই রচিত হতে পারে। দ্রষ্টব্য ‘চৌপদী’, ‘দ্বিপদী’ ও ‘পয়ার’।
অক্ষরগোন। ত্রিপদীর দৃষ্টান্ত আছে ১২ এবং ৩৩ পৃষ্ঠায়। উভয়ত্রই তৃতীয় পদে দুই মাত্রা করে বেশি আছে। কিন্তু ১১৯ পৃষ্ঠার ‘চেয়ে থাকে মুখপানে’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটিতে তৃতীয় পদে দুই মাত্রা কম। এই দুই নিয়মই সুপ্রচলিত। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন সারদামঙ্গল কাব্যের ছন্দও ত্রিপদী (পৃ ১৭৮)। বস্তুত তা নয়। ত্রিপদীর ভঙ্গিতে লিখিত হলেও আসলে ওই ছন্দের প্রতিপংক্তিতে আছে চার পদ। তৃতীয় লাইনটা দ্বিপদী, আট মাত্রার পরে পদচ্ছেদ অর্থাৎ অর্ধযতি সুস্পষ্ট। প্রথম দুই পদের সঙ্গে তৃতীয় পদের মিল নেই বলে তৃতীয় ও চতুর্থ পদ এক লাইনে লিখিত হয়েছে। কিন্তু মিল না থাকলেও ওই যতিটি ঠিকই আছে। যেখানে আকস্মিকভাবে মিল এসে গেছে সেখানে এই পদবিভাগ সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। দৃষ্টান্ত এই (পৃ ১৭৭)—
কি বলেছি অভিমানে
শুনো না শুনো না কানে,
বেদনা দিও না প্রাণে
ব্যথার সময়।