কলামাত্রা গণনার রীতি প্রবর্তন করেন, তখন আর ‘দ্বাদশাক্ষর’-শ্রেণীর ছন্দে যুক্তাক্ষর প্রয়োগে বাধা রইল না (পৃ ৫, ৬৭, ১২৫)। ফলে মানসী রচনার সময় থেকে বাংলা সাহিত্যে ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দে অক্ষরমাত্রা গণনার রীতি অর্থাৎ যুগ্মধ্বনি বা রুদ্ধদলকে সংকুচিত করে একমাত্রা বলে গণনার রীতি অচল হয়ে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতে আজকাল এই রীতির ছন্দে রুদ্ধদলের সংকোচন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বা অত্যাচার (পৃ ৫৪, ১২৪, ২১৪)। কড়ি ও কোমল কাব্যের ‘বিরহ’ এবং মানসী কাব্যের ‘ভুলভাঙা’, এই দুটি কবিতা রচনার সময় (১৮৮৭) থেকেই রবীন্দ্রনাথ ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দে সংকুচিত রুদ্ধদলের প্রয়োগ বর্জন করেন। এইজাতীয় ছন্দে উক্তপ্রকার ধ্বনিসংকোচের ফলেই ‘প্রত্যেক যুক্ত অক্ষরে রসনা বাধা প্রাপ্ত হয়’। তাই তাঁর মতে দ্বাদশাক্ষর-জাতীয় ছন্দে যুক্তাক্ষর (শব্দের মধ্য- ও অন্ত-স্থিত) ব্যবহার ‘অত্যাচার’ অর্থাৎ ‘ছন্দোভঙ্গ’ (পৃ ১৭৮) বলেই গণ্য।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, তিনি দায়ে পড়ে একটিমাত্র রচনায় এ-রকম অত্যাচার করেছেন অর্থাৎ ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দে যুগ্মধ্বনি বা রুদ্ধদলকে সংকুচিত করে এক য়ুনিট বা কলামাত্রা বলে গণ্য করেছেন (পৃ ১২৪-২৫, ২১৪-১৫)। যথা—
প্রভু বুদ্ধ লাগি | আমি ভিক্ষা মাগি।
বস্তুত ‘বিরহ’ এবং ‘ভুলভাঙা’ রচনার (১৮৮৭) পরবর্তী কালেও রবীন্দ্রসাহিত্যে এ-রকম রচনার আরও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, মানসী কাব্যেরই কোনো কোনো রচনাতে এ-রকম ব্যতিক্রমের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যেমন, ‘নববঙ্গদম্পতির প্রেমালাপ’ কবিতাটিতে (১৮৮৮) আছে—
বসন্ত কি নাই | বনলক্ষ্মী তাই |
কাঁদিছে আকুল | স্বরে?