অতঃপর চিত্রা কাব্যের ‘দুঃসময়’-নামক কবিতাটি (১৮৯৪) উল্লেখযোগ্য। এর প্রথম দুই লাইন এই—
বিলম্বে এসেছ | রুদ্ধ এবে দ্বার,
জনশূন্য পথ | রাত্রি অন্ধকার।
‘কথা’ কাব্যের ‘প্রভু বুদ্ধ লাগি’ ইত্যাদি পূর্বোল্লিখিত কবিতাটি (শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা, ১৮৯৭) ‘দুঃসময়’ রচনার পরবর্তী। ‘কাহিনী’ গ্রন্থের ‘লক্ষ্মীর পরীক্ষা’ নাটিকাটিতেও (১৮৯৭) কিছু কিছু ব্যতিক্রমের দৃষ্টাক্ত আছে। যথা—
মরেওনি বটে | জন্মেওনি কভু।...
খবর্দার কেউ | নোড়ো চোড়ো নাকো।
এগুলিকে দ্বাদশাক্ষর ছন্দের পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। বস্তুত এগুলি মাত্রাবৃত্ত বা কলাগোনা ছয়মাত্রা-পর্ব ছন্দের ব্যতিক্রম মাত্র। অতঃপর এ প্রসঙ্গে নৈবেদ্য কাব্যের (১৯০১) প্রথম কবিতাটির উল্লেখ করা যেতে পারে। যথা—
তোমার বিচিত্র | এ ভবসংসারে |
কর্মপারাবার | পারে হে,
নিখিল জগৎ | জনের মাঝারে |
দাঁড়াব তোমারি | সম্মুখে।
এটিও ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দ। অথচ এখানে যুগ্মধ্বনি বা রুদ্ধদলকে সংকুচিত করে এক কলামাত্র। বলে গণ্য করা হয়েছে। ফলে এ সব রচনা পড়বার সময় যুক্তাক্ষরগুলিতে রসনা বাধা প্রাপ্ত হয়। এইজন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তখন ছন্দের সদর রাস্তা ও গ্রাম্য রাস্তার মতো এবড়ো-খেবড়ো থাকত, অভ্যাসের গতিকে কেউ সেটাকে নিন্দনীয় বলে মনেও করেনি’ (পৃ ৬৬)।