পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৫৩

শব্দটির প্রয়োগ করেছেন বেশি (পৃ ৬৯-৭০, ৭৩, ১০১)। চতুর্দশপদী কবিতা মানে চোদ্দ পংক্তির কবিতা, যদিও এর প্রত্যেক পংক্তিই পারিভাষিক অর্থে দ্বিপদী। অনুরূপভাবে রবীন্দ্রনাথ চার পংক্তি বা লাইনের রচনাকে চৌপদী নামে অভিহিত করেছেন। ফাল্গুনী নাটকে এ-রকম চৌপদী রচনার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। যথা—

যে পদ্মে লক্ষ্মীর বাস, দিন অবসানে
সেই পদ্ম মুদে দল সকলেই জানে।
গৃহ যার ফুটে আর মুদে পুনঃপুনঃ
সে লক্ষ্মীরে ত্যাগ করো, শুন, মূঢ়, শুন।

পারিভাষিক অর্থে এটিকে চৌপদী চলা চলে না। অপারিভাষিক অর্থে এই ‘রচনা’টিকে চৌপদী বলা যেতে পারে, কিন্তু ছন্দের বিচারে এর প্রতি পংক্তিই দ্বিপদী।

 কোনো কোনো স্থলে পর্ব এবং অন্যত্র উপপর্ব অর্থেও পদ শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে। যেমন—‘কাঁপিলে: পাতা | নড়িলে: পাখি’ এখানে প্রত্যেকটি উপপর্ব পদ নামে অভিহিত হয়েছে (পৃ ১৪)। ‘অহহ কল | -য়ামি বল | -য়াদিমণি | -ভূষণং’ এই দৃষ্টান্তটির প্রত্যেক পর্ব (পাঁচ মাত্রার) পদ নামে বর্ণিত হয়েছে (পৃ ৪০)। পয়ারের পর্বকে কোথাও বলা হয়েছে ‘পদক্ষেপ’ (পৃ ৩৫), আবার অন্যত্র পয়ারের পদকেই ‘পদক্ষেপ’ বলা হয়েছে (পৃ ৪১)।

 সংস্কৃতে শ্লোকের একচতুর্থাংশকে পাদ বা পদ বলা হয়। ‘চরণ’ পদের প্রতিশব্দ। এই হিসাবে উক্ত চতুর্থাংশ বোঝাতে চরণ শব্দও ব্যবহৃত পদ ও চরণ কখনও বিভিন্নার্থে প্রযুক্ত হয় না। বাংলায় পংক্তি অর্থে পদ শব্দের ন্যায় চরণ শব্দের প্রয়োগও দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ ছন্দ-আলোচনায় কোনো অর্থেই চরণ শব্দ ব্যবহার করেন নি। পংক্তি