এখানে ‘পদ’ শব্দ প্রয়োজনমতো পদ, পর্ব বা উপপর্ব অর্থে গ্রহণীয়। এর দৃষ্টান্ত দ্রষ্টব্য ১১-১৫ পৃষ্ঠায়। বাংলা ছন্দে যতিবিভাগের গোড়াতে যেখানে ঝোঁক পড়ে সেখানেই তালি দিতে হয় এবং তদনুসারেই ছন্দের স্পন্দন বা লয় অর্থাৎ রিদ্ম্ ধরা পড়ে (পৃ ৪২-৪৩)। তিনমাত্রার ঝোঁক (পৃ ৯৮) কথার দ্বারা বোঝা যায় তিনমাত্রা-উপপর্বের ঝোঁক।
একটা প্রচলিত ধারণা এই যে, শুধু চলতি বাংলার ছড়াজাতীয় ছন্দেই ঝোঁক বা প্রস্বরের প্রভাব দেখা যায় অর্থাৎ শুধু এইজাতীয় ছন্দকেই বলা যায় প্রাস্বরিক ছন্দ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে-সব দৃষ্টান্তে প্রস্বরচিহ্ন দিয়ে ঝোঁক বা তালি দেবার নিয়ম ও বৈচিত্র্য সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন, সেগুলি প্রায় সবই ছড়াজাতীয় ছন্দোরীতির বহির্বর্তী। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের মতে বাংলা ছন্দের তিন শাখাতেই ঝোঁক বা প্রস্বরের ক্রিয়া আছে এবং সর্বত্রই ছন্দের প্রত্যেক যতিবিভাগের গোড়াতেই ঝোঁক পড়ে। ‘খুব তার | বোলচাল | সাজ ফিট | ফাট’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটি (পৃ ৭০) ছড়াজাতীয় নয়। এটি রচিত হয়েছে কলামাত্রিক ছন্দে, অথচ এ ছন্দটা যে বেশ ঝোঁকালো তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। তবে চলতি বাংলার ছড়াজাতীয় দলমাত্রিক (syllabic) ছন্দেই প্রস্বরের প্রভাব বেশি, এ কথা রবীন্দ্রনাথের উক্তি থেকেও বোঝা যায়।‘বাংলার অসাধু ভাষাটা খুব জোরালো ভাষা’ (পৃ ৬) এবং বাংলা ভাষার চলতি রীতিতেই তার ‘অন্তরের স্বাভাবিক সুর’ (পৃ ৭) প্রকাশ পেয়েছে, আর এ জন্যই চলতি বাংলার ছন্দকেই বলা হয়েছে ‘বাংলা ভাষার স্বাভাবিক ছন্দ’ (পৃ ১৭০-৭১)। “বাংলা চলতি ভাষার ধ্বনিটা হসন্তের সংঘাতধ্বনি, এই জন্য ধ্বনিহিসাবে সংস্কৃতের চেয়ে ইংরেজির সঙ্গে তাহার মিল বেশি” (পৃ ১৭, ১২৮)। ছন্দের দিক্ থেকেও ইংরেজির সঙ্গে চলতি বাংলা ছন্দের মিল দেখা যায়; উভয়ত্রই ‘হসন্তের সংঘাতধ্বনি’কে ছন্দের কাজে লাগানো হয়। ‘কই পালঙ্ক,