পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৬
ছন্দ

 মন্দাক্রান্তা (পৃ ৪৬)—এই বিখ্যাত সংস্কৃত ছন্দটির প্রতি পদে অর্থাৎ পংক্তিতে থাকে সতরটি করে ‘অক্ষর’ বা ধ্বনি, অর্থাৎ সিলেব্‌ল্। এই সতরটি ধ্বনি আবার তিনটি যতিবিভাগে বিভক্ত; প্রথম ভাগে চার, দ্বিতীয় ভাগে ছয় এবং তৃতীয় ভাগে সাতটি ধ্বনি থাকে। প্রথম ভাগের চারটি ধ্বনিই গুরু, দ্বিতীয় ভাগে শেষ ধ্বনিটি গুরু এবং তৃতীয় ভাগে দ্বিতীয় ও পঞ্চম বাদে বাকি সব গুরু। এই হল মন্দাক্রাস্তার নিয়ম। দৃষ্টান্ত (পৃ ১৯০) দিলেই সহজে বোঝা যাবে—

— — — — ৴ ৴ ৴ ৴ ৴ — — ৴ — — ৴ — —
মেঘালোকে | ভবতি সুখিনোঽ | প্যন্যথাবৃত্তিচেতঃ।

সংস্কৃত ছন্দশাস্ত্রকাররা মন্দাক্রান্তার পংক্তিকে তিনটি যতিবিভাগেই বিভক্ত করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এটিকে বিভক্ত করেন চার ভাগে (পৃ ৪৬-৪৭, ১৯০)। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তও তাই করতেন। এঁরা সকলেই উল্লিখিত তৃতীয় অংশটিকে দুই যতিভাগে বিভক্ত করেন; প্রথম ভাগে ধ্বনিসংখ্যা চার এবং দ্বিতীয় ভাগে তিন।

 রবীন্দ্রনাথের মতে মন্দাক্রান্তার ধ্বনিবিভাগ চার-ছয়-চার-তিন। গুরুধ্বনিকে বিশ্লিষ্ট করে দুই মাত্রা বলে ধরলে মন্দাক্রান্তার মাত্রাবিভাগ হয় যথাক্রমে—আট-সাত-সাত-পাঁচ। রবীন্দ্রনাথের ধারণা শেষভাগে চার মাত্রা (পৃ ৪৭,১৯০); কেবল যতির প্রভাবে তা পাঁচ মাত্রায় পরিণত হয়। মাত্রা পরিমাণ হিসাবে মন্দাক্রান্তাকে সর্বপ্রথম বাংলায় রূপান্তরিত করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ। যথা—

ফুল তাহে ধরিয়াছে,
লাবণ্যে ভরি’ আছে,
বনেরে করিয়াছে
জীবন-দান।

—স্বপ্নপ্রয়াণ, ৩য় সং (১৯১৪), ২।১৪০