ইচ্ছা সম্যক্ | তব দরশনে | কিন্তু পাথেয় নাস্তি-।
পায়ে শিক্লী | মন উড়ু উড়ু- | একি দৈবের শাস্তি-।[১]
‘কোন’ ‘মন’ এবং ‘দৈবের’ শব্দের শেষ অক্ষরটির অকারান্ত উচ্চারণ করতে হবে। ‘কিছুই’ শব্দের ই-র স্বাতন্ত্র্যও স্বীকার্য। সংস্কৃত ছন্দশাস্ত্রের নিয়মে পদের অন্তস্থিত লঘুধ্বনিও ছন্দের প্রয়োজনমতো গুরু বলে স্বীকৃত হয়। তদনুসারে ‘নাস্তি’ এবং ‘শাস্তি’ শব্দের ইকার দীর্ঘরূপেই উচ্চার্য। এ সব স্থলে পূর্ণযতির প্রভাবেই তৎপূর্ববর্তী লঘুধ্বনিও গুরুত্ব লাভ করে। বাংলায় এই নিয়মটিকে প্রসারিত করে ছন্দের প্রয়োজনে যে-কোনো সুস্পষ্ট যতির পূর্ববর্তী লঘুধ্বনিকে গুরু বলে গণ্য করা চলে। তদনুসারে ‘উড়ু উড়ু’ শব্দের শেষ উকারটির উচ্চারণ হবে দীর্ঘ।
লক্ষ্য করা প্রয়োজন যে, এই শ্লোকটিতে সংস্কৃত শাস্ত্র অনুসারে প্রতিপংক্তি স্বাভাবিকভাবে তিন যতিভাগে বিভক্ত হয়েছে; বাংলা পদ্ধতি অনুসারে চার ভাগ হয় নি।
- ↑ এটি রাজনারায়ণ বসু-কে লিখিত পত্ররূপে রচিত হয়। রচনাটির নাম ছিল ‘দীন দ্বিজের রাজ-দর্শন না ঘটিবার কারণ’। দ্রষ্টব্য সাহিত্যসাধক-চরিতমালা ৬৬ (মাঘ ১৩৫৪), পৃ ৩৯ এবং বিশ্বভারতী পত্রিকা, ১৩৫৯ বৈশাথ-আষাঢ়, পৃ ১৮১।
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাল্যস্মৃতি প্রসঙ্গে এই রচনাটি উদ্ধৃত করেছেন। তাঁর উদ্ধৃতিতে কয়েকটি পরিবর্তন দেখা যায়। (১) শেষ দুই পদ পূর্বে এবং প্রথম দুই পদ পরে স্থাপিত হয়েছে। (২) ‘কর যদি কৃপা’ হয়েছে ‘করে যদি কৃপা’। এই পরিবর্তনটুকু হয়েছে সম্ভবত অর্থসংগতির খাতিরে, যদিও তাতে ছন্দোগত ত্রুটি ঘটে। (৩) ‘তব দরশনে’ রূপ নিয়েছে ‘জগদরশনে’, সম্ভবত সর্বত্র ব্যবহার্যতার খাতিরে। এই পরিবর্তনগুলি রচয়িতারই কৃত বা অভিপ্রেত বলে মনে হয়। রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতিতে আছে ‘ভ্রমণগমনে’, এটা রচয়িতার অনুমোদিত কিনা বলা কঠিন। দ্রষ্টব্য সত্যেন্দ্রনাথকৃত ‘আমার বাল্যকথা’—ভারতী, ১৩১৯ ভাদ্র, পৃ ৪৫৪ এবং ‘আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাস’ গ্রন্থ (১৯১৫), পৃ ২৮।