পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
ছন্দ

পর্ণের পাত্রে- ||
ফাল্গুন রাত্রে- ||
মুকুলিত মল্লিকা মাল্যের বন্ধন।

—গীতবিতান (তৃতীয় সং), পৃ ৫০৫

এভাবে পদের অন্তে যতিমাত্রার অবকাশ রাখার দৃষ্টান্ত সাধারণত দেখা যায় কলামাত্রার ছন্দেই। পর্বের অন্তে এ-রকম অবকাশের দৃষ্টান্ত বিরল।

 রবীন্দ্রনাথের মতে ‘যতিকে কেবল বিরতির স্থান না দিয়ে তাকে পূর্তির কাজে লাগাবার অভ্যাস আরম্ভ হয়েছে আমাদের ছড়ার ছন্দ থেকে’ (পৃ ১২৬)। ছড়ার ছন্দে পর্বে-পর্বে এমন কি উপপর্বে-উপপর্বে মাত্রাপূরণের অবকাশ থেকে যাবার কথা নানা স্থানেই বলা হয়েছে (পৃ ৬২-৬৩)। দ্রষ্টব্য ‘ফাঁক’।

 যুগ্মধ্বনি (পৃ ৫২)— এটি মূলত বর্তমান সম্পাদকের প্রযুক্ত পরিভাষা। ধ্বনি মানে সিলেব্‌ল্ এবং যুগ্মধ্বনি মানে সেই সিলেব্‌ল্‌ যার অন্তে আশ্রিত স্বর বা ব্যঞ্জন অবস্থিত থাকে। যথা— বৈ (=বই্), গৌ (=গউ্), যাও্, ঢং, উঃ, বিদ্, দ্বান্। সুতরাং যুগ্মধ্বনি (closed syllable) এবং যুক্তাক্ষর (compound letter) একার্থক নয়। ‘ছন্দ’ শব্দের ‘ছন্’ যুগ্মধ্বনি, ‘দ’ অযুগ্মধ্বনি; আর ‘ছ’ অযুক্তাক্ষর এবং ‘ন্দ’ যুক্তাক্ষর। ছন্দোবিশ্লেষণে ছন্+দ বিভাগই স্বীকার্য, ছ+ন্দ বিভাগ বর্জনীয়। কারণ সিলেব্‌ল্‌বিভাগই উচ্চারণসম্মত অক্ষরবিভাগ তা নয়। অক্ষর উচ্চারণের অবিকল প্রতিরূপ নয়। বস্তুত বাংলায় অক্ষরগণনা হয় কৃত্রিম লিপিরূপ দেখে। তাই বাংলায় ‘পর্বত’ শব্দে তিন অক্ষর অথচ ‘শরবত’ শব্দে চার অক্ষর গণিত হয়, যদিও উভয় শব্দেই সিলেব্‌ল্‌সংখ্যা দুই। ‘কাশ্মীর’ শব্দে তিন অক্ষর, ‘পশমী’ শব্দেও তাই। অথচ সিলেব্‌ল্‌সংখ্যা উভয়ত্রই দুই।