পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০২
ছন্দ

চলতিমিশ্রিত সাধুরীতির ভাষাই এই ছন্দোরীতিয় সাধারণ আশ্রয়। সাধারণ কলামাত্রার ছন্দকে তিনি বিশেষ কোনো নাম দেননি; উৎপত্তির সূত্র ধরে তার পরিচয় দিয়েছেন সংস্কৃত-ভাঙা ছন্দ বলে (পৃ ১৩২)। এরই নামান্তর মাত্রাবৃত্ত। এই ছন্দোরীতি প্রত্যক্ষত সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন হয়নি, হয়েছে প্রাকৃত থেকে। কিন্তু আধুনিক কলামাত্রারীতির প্রবর্তক স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এবং এই রীতি প্রবর্তনের ব্যাপারে তিনি অনেক পরিমাণেই নির্ভর করেছেন গীতগোবিন্দ কাব্যের গানগুলির উপরে। সুতরাং ‘সংস্কৃত-ভাঙা’ পরিচয়টা নিরর্থক বলা যায় না। এই ছন্দোরীতিও সাধারণত চলতিমিশ্রিত সাধু- বা সংস্কৃত-বাংলাতেই রচিত হয়; তবে অমিশ্র প্রাকৃত-বাংলাতেও এই ছন্দোরীতির বহুল প্রয়োগ দেখা যায়।[১] এই সাধারণ কলামাত্রিক রীতিরও দুই রূপ (পৃ ২৭৮)। একটি নব্য বা রাবীন্দ্রিক রূপ, মানসী কাব্যে যার প্রথম সার্থক ও ধারাবাহিক প্রয়োগ। আরএকটি রূপ সর্বতোভাবেই সংস্কৃতানুগ, জয়দেবের গীতগোবিন্দের গানগুলিই তার আদর্শ। একে বলা যায় প্রত্ন (archaic) বা জয়দেবী রূপ। এর আধুনিক দৃষ্টান্ত ‘জনগণমন-অধিনায়ক’ (পৃ ১৯৯-২০০)।

 শার্দুলবিক্রীড়িত (পৃ ২১৩)—এই বিখ্যাত সংস্কৃত ছন্দটির প্রত্যেক পদে অর্থাৎ পংক্তিতে থাকে উনিশ অক্ষর বা বর্ণ। এই উনিশটি অক্ষর আবার দুটি যতিবিভাগে বিভক্ত থাকে; প্রথম যতিবিভাগে বার অক্ষর, দ্বিতীয় যতিবিভাগে সাত অক্ষর। লঘুগুরু হিসাবে এই ছন্দের অক্ষরবিদ্যাস এ-রকম (পৃ ১৪৮)।—

   ৴ ৴ — ৴ — ৴ ৴ ৴ — — — ৴ — — ৴ —
মেঘৈর্মে দু র ম স্ব রং ব ন ভু বঃ | শ্যামাস্ত মাল দ্রুমৈঃ।

  1. দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রহাসিনী কাব্যের ‘ভাইদ্বিতীয়া’ এবং সানাই কাব্যের ‘সম্পূর্ণ’, এই কবিতা-ছুটি উল্লেখযোগ্য।