পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
৩০৩

এই অসমান যতিবিভাগই শার্দুলবিক্রীড়িত ছন্দকে গদ্যরচনা সুলভ গাম্ভীর্য দান করে। বাংলা অমিত্রাক্ষর ছন্দেরও অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য তার যতিবিভাগের অসমতা, আর এই অসমতাই তার গাম্ভীর্যের একটি বড়ো কারণ। যতিবিভাগ অসমান বলে প্রতিবিভাগের মোট মাত্রাপরিমাণও স্বভাবতই অসমান। এইজন্যই রবীন্দ্রনাথ শার্দুলবিক্রীড়িত প্রভৃতি ছন্দকে বলেছেন ‘অসমান মাত্রাভাগের ছন্দ’ (পৃ ১৩৩)।

 শিখরিণী (পৃ ১৩৩-৩৪)— এটিও একটি অসমান মাত্রাভাগের ছন্দ। মন্দাক্রান্তার ন্যায় এটিও অক্ষরের ছন্দ। মন্দাক্রান্তার প্রতিপংক্তি তিনটি যতিভাগে বিভক্ত। কিন্তু শিখরিণীর যতিভাগ দুটি, প্রথম ভাগের অক্ষরসংখ্যা ছয়, দ্বিতীয় ভাগের অক্ষরসংখ্যা এগার। লঘুগুরুক্রমে এই ছন্দের অক্ষরবিন্যাস এ-রকম—

৴ — — — — —| ৴ ৴ ৴ ৴ ৴ — — ৴ ৴ ৴ —

দেখা যাচ্ছে এর প্রথম ভাগে ছয় অক্ষরে এগার মাত্রা, আর দ্বিতীয় ভাগে এগার অক্ষরে চোদ্দ মাত্রা।

 কবি ভারতচন্দ্রের বিখ্যাত নাগাষ্টকং কবিতাটি (রচনাকাল আলুমানিক ১৭৫০ সাল) এই শিখরিণী ছন্দে রচিত। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের “ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের জীবনবৃত্তান্ত” গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এই কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৫ সালে। নাগাষ্টকং শিখরিণী ছন্দে রচিত হলেও এটির কিছু কিছু বিশিষ্টতা আছে। ভারতচন্দ্র নাগাষ্টকংএর অনেক স্থলেই পংক্তিমধ্যে একটি অতিরিক্ত যতি স্থাপন করেছেন এবং সুস্পষ্ট মিল দিয়ে এই যতিটিকে পরিস্ফুট করেছেন। যথা—

৴ — — — — — ৴ ৴ ৴ ৴ ৴ — —  ৴ ৴ ৴ —
ভ ব দ্দেশে শেষে | সু র পু র বিশেষে | ক থ মপি-।...
সমস্তং মে নাগো | গ্রসতি সবিরাগো | হরি হরি-।

এর প্রতিবিভাগের মাত্রাসংখ্যা হচ্ছে যথাক্রমে এগার, নয় এবং পাঁচ।