পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৮
ছন্দ

সংগীত হিল্লোল | অঙ্গের বায়

এটাও দুইমাত্রার ছন্দ, অর্থাৎ এটাও ‘দুয়ের লয়ে চলে’ (পৃ ৩৯)। অথচ এর শোষণশক্তি নেই, অর্থাৎ এখানে যুগ্মধ্বনি (রুদ্ধদল) সংকুচিত হচ্ছে না।

চন্দনচর্চিত | সুনীল অঙ্গখানি |
কণ্ঠেতে পুষ্পের | মাল্য।

এখানেও প্রতি পূর্ণ বিভাগে আট মাত্রা, কিন্তু এর যুগ্মধ্বনিগুলি প্রসারিত হয়ে দুই মাত্রার স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এ হচ্ছে ‘দুর্বল বাহন’ (পৃ ১২১), অর্থাৎ এটা গুরুভারবহ নয়।

 সুতরাং দেখা যাচ্ছে সমমাত্রার অর্থাৎ দুইমাত্রা-উপপর্বের ছন্দের দুই রূপ—প্রসারক ও সংকোচক। এই দুই রূপেরই পারিভাষিক নাম যথাক্রমে ‘সরল কলামাত্রিক’ ও ‘বিশিষ্ট কলামাত্রিক’। এই রূপভেদ আসলে রীতিভেদ, এবং রীতিভেদ হচ্ছে ছন্দের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিভেদের পরিচায়ক। রবীন্দ্রনাথের মতে ‘চলনের ভেদেই ছন্দের প্রকৃতিভেদ’ (পৃ ৩৬)। কথাটা অসার্থক নয়, কারণ চলন অর্থাৎ উপপর্বের আয়তনের দ্বারাই ছন্দের রিদ্‌ম্ অর্থাৎ স্পন্দনলীল। নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু মাত্রাস্থাপনের রীতিভেদে উপপর্বেরই প্রকৃতিভেদ ঘটে। সুতরাং ছন্দপ্রকৃতির উপরে চলনভেদের চেয়ে রীতিভেদের প্রভাবই গভীরতর। দ্রষ্টব্য ‘শাখা’।

 এই গ্রন্থে ‘সমমাত্রা’ কথাটি অপারিভাষিক অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে কোনো কোনে। স্থানে। যেমন—পালামৌ গ্রন্থের গদ্য ‘সমমাত্রায় বিভক্ত নয়’ কিংবা যজুর্বেদের গদ্যমন্ত্রের যে পদবিভাগ তা সমমাত্রার নয় (পৃ ১৫৩)। এখানে সমমাত্রা মানে সমানসংখ্যক-মাত্রাপরিমিত অর্থাৎ সমায়তন।

 অন্যত্র ‘সমমাত্রক ছন্দ’ মানে তরঙ্গভঙ্গিহীন সমতল ছন্দ (পৃ ১৭৩,