পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২

ছন্দের হসন্ত হলন্ত[১]

 ...আমার নিজের বিশ্বাস যে, আমরা ছন্দ রচনা করি স্বতই কানের ওজন রেখে, বাজারে প্রচলিত কোনো বাইরের মানদণ্ডের দ্বারা মেপে মেপে এ কাজ করিনে, অন্তত সজ্ঞানে নয়। কিন্তু ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেন[২] এই বলে আমাদের দোষ দিয়েছেন যে— আমরা একটা কৃত্রিম মানদণ্ড দিয়ে পাঠকের কানকে ফাঁকি দিয়ে তার চোখ ভুলিয়ে এসেছি, আমরা ধ্বনি চুরি করে থাকি অক্ষরের আড়ালে।

 ছন্দোবিৎ কী বলছেন ভালো করে বোঝবার চেষ্টা করা যাক। তাঁর প্রবন্ধে আমার লেখা থেকে কিছু লাইন তুলে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তস্বরূপে ব্যবহার করেছেন। যথা—

+ | + | |
উদয়দিগন্তে ঐ শুভ্র শঙ্খ বাজে।
+ |
মোর চিত্ত মাঝে,
+
চিরনূতনেরে দিল ডাক
| +
পঁচিশে বৈশাখ।

তিনি বলেন, “এখানে দণ্ডচিহ্নিত যুগ্মধ্বনিগুলিকে এক বলে ধরা হয়েছে, কারণ এগুলি শব্দের মধ্যে অবস্থিত; আর যোগচিহ্নিত যুগ্মধ্বনিগুলিকে দুই বলে ধরা হয়েছে, যেহেতু এগুলি শব্দের অন্তে অবস্থিত।” অর্থাৎ ‘উদয়’এর অয়্ হয়েছে দুই মাত্রা অথচ ‘দিগন্ত’এর

  1. ৪৯ পৃষ্ঠায় পাদটীকা ১ দ্রষ্টব্য।
  2. বিচিত্রা—১৩৩৮ অগ্রহায়ণ: বাংলা অক্ষবৃত্ত ছন্দের স্বরূপ।