পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
ছন্দ

দেখা যাচ্ছে এটুকু কমিবেশিতে মামলা চলে না, বাংলা ভাষার স্বভাবের মধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্রয় আছে। যদি লেখা যেত

সখাসনে মহোৎসবে বৎসর যায়

তাহলে নিয়ম বাঁচত, কারণ পূর্ববর্তী ওকারের সঙ্গে খণ্ড ৎ মিলে একমাত্রা; কিন্তু কর্ণধার বলছে ঐখানটায় তরণী যেন একটু কাত হয়ে পড়ল। আমি এক জায়গায় লিখেছি ‘উদয়-দিক্‌প্রান্ত-তলে’। ওটাকে বদলে ‘উদয়ের দিক্‌প্রান্ত-তলে’ লিখলে কানে খারাপ শোনাত না একথা প্রবন্ধলেখক বলেছেন, সালিসির জন্যে কবিদের উপর বরাত দিলুম।

 অপরপক্ষে দেখা যাক চোখ ভুলিয়ে ছন্দের দাবিতে ফাঁকি চালানো যায় কিনা।

এখনই আসিলাম দ্বারে
অমনই ফিরে চলিলাম,
চোখও দেখেনি কভু তারে
কানই শুনিল তার নাম।

‘তোমারি’, ‘যখনি’ শব্দগুলির ইকারকে বাংলা বানানে অনেক সময় বিচ্ছিন্ন করে লেখা হয়, সেই সুযোগ অবলম্বন করে কোনো অলস কবি ওগুলোকে চারমাত্রার কোঠায় বসিয়ে ছন্দ ভরাট করেছেন কি না জানিনে, যদি করে থাকেন বাঙালি পাঠক তাঁকে শিরোপা দেবে না। ওদের উকিল তখন ‘বৎসর’ ‘উৎসব’ ‘দিক্‌প্রান্ত’ প্রভৃতি শব্দগুলির নজির দেখিয়ে তর্ক করবে। তার একমাত্র উত্তর এই যে, কান যেটাকে মেনে নিয়েছে কিংবা মেনে নেয়নি চোখের সাক্ষ্য নিয়ে কিংবা বাঁধানিয়মের দোহাই দিয়ে সেখানে তর্ক তোলা অগ্রাহ্য। যে-কোনো কবি উপরের ছড়াটাকে অনায়াসে বদল করে লিখতে পারে—