পাতা:ছাড়পত্র - সুকান্ত ভট্টাচার্য.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কবিতার বিচিত্র কলাকৌশলে, ছন্দের আশ্চর্য দক্ষতায়, শব্দনির্বাচনের অশেষ নৈপুণ্যে এই কবি কিশোর রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীদেরও অভিভূত করেছে। কিন্তু আঙ্গিকের মায়ায় সুকান্ত কখনও বাঁধা পড়েনি। ‘ছাড়পত্রে’র প্রথম যুগের কবিতার সঙ্গে পরের যুগের কবিতা মিলিয়ে দেখলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ‘ঠিকানা’ কিম্বা ‘বোধনে’র সঙ্গে ‘প্রার্থী’র তফাৎ অনেক। ‘প্রার্থী’তে এসে সুকান্ত সম্পূর্ণ একটা নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে। পদ্যছন্দ বর্জন ক’রে সহজ নিরাভরণ গদ্যে সে যে আকুতি প্রকাশ করেছে, তা অন্য কোন উপায়ে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। ‘আর উত্তাপ দিও রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে’—করুণা বা অনুকম্পার কথা নয়, জ্বলন্ত বিশ্বাসের অগ্নিগর্ভ বাণী।

সুকান্তর প্রথম দিকের কবিতায় তার জীবনদর্শন একটু বেশী রকমের প্রকট মনে হতে পারে। হয়ত অতটা স্পষ্টবাদিতা অনেকের পছন্দ হবে না। যেখানে সমাজের শত্রুদের সে নাম ক’রে ক’রে চিনিয়ে দিয়েছে, যেখানে সে সংগ্রামের অগ্নিবর্ণ পথে পাঠকদের হাত ধ’রে ডেকেছে—সেখানে কবিতার সীমানা নিয়ে মতান্তর হতে পারে। কিন্তু সুকান্তর শেষের দিকে লেখা ‘খবর’, ‘চিল’, ‘প্রার্থী’ প্রভৃতি কাউকেই মুগ্ধ না ক’রে পারে না। শেষোক্ত কবিতাগুলি যে অনেক বেশী গভীর, অনেক বেশী মর্মস্পর্শী—এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই।

‘ছাড়পত্রে’র কাব্যবিচার আমার উদ্দেশ্য নয়, সে ক্ষমতাও আমার নেই। সুকান্তর কবিতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে আমার যেটুকু পরিচয়, সেইটুকুই শুধু এখানে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি।

সুকান্তর সেই সমস্ত অজ্ঞাতনামা বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা কষ্ট ক’রে কবিতাগুলি বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ ক’রে দিয়েছিলেন। ‘ছাড়পত্রে’র প্রচ্ছদপট এঁকে দিয়েছেন খ্যাতনামা শিল্পী সত্যজিৎ রায়—তাঁকে অজস্র ধন্যবাদ। এ ছাড়াও অন্যান্য বহু বন্ধু নানাভাবে সাহায্য ক’রে বাধিত করেছেন। পরবর্তী সংস্করণ যাতে ত্রুটিহীন হ’য়ে উঠতে পারে তার জন্যে পাঠকপাঠিকাদের সহযোগিতা কামনা করি।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়