পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবং সুদূরব্যাপী চেনাশোনা আছে। আমি বেশ মনে করতে পারি, বহু যুগ পূর্বে যখন তরুণী পৃথিবী সমুদ্রস্নান থেকে সবে মাথা তুলে উঠে তখনকার নবীন সূর্যকে বন্দনা করছেন, তখন আমি এই পৃথিবীর নূতন মাটিতে কোথা থেকে এক প্রথম জীবনোচ্ছাসে গাছ হয়ে পল্পবিত হয়ে উঠেছিলুম। তখন পৃথিবীতে জীবজন্তু কিছুই ছিল না, বৃহৎ সমুদ্র দিনরাত্রি তুলছে, এবং অবোধ মাতার মতো আপনার নবজাত ক্ষুদ্র ভূমিকে মাঝে মাঝে উন্মত্ত আলিঙ্গনে একেবারে আবৃত করে ফেলছে। তখন আমি এই পৃথিবীতে আমার সমস্ত সর্বাঙ্গ দিয়ে প্রথম সূর্যালোক পান করেছিলুম,নৰশিশুর মতো একটা স্মক মঞ্চের পুলকে নীলাম্বরতলে আন্দোলিত হয়ে উঠেছিলুম, এই আমার মাটির মাতাকে আমার সমস্ত শিকড়গুলি দিয়ে জড়িয়ে এর স্তন্তরস পান করেছিলুম। একট। মূঢ় আনন্দে আমার ফুল ফুটত এবং নবপল্লব উদগত হত। যখন ঘনঘট। করে বর্ষার মেঘ উঠত তখন তার ঘনশুাম ছায়া আমার সমস্ত পল্লবকে একটি পরিচিত করতলের মতো স্পর্শ করত। তার পরেও নব নব যুগে এই পৃথিবীর মাটিতে আমি জন্মেছি। আমরা স্থজনে একলা মুখোমুখি করে বসলেই আমাদের সেই বহুকালের পরিচয় যেন অল্পে অল্পে মনে পড়ে। আমার বসুন্ধর এখন একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল প’রে ঐ নদীতীরের শস্যক্ষেত্রে বসে আছেন। আমি তার পায়ের কাছে, কোলের কাছে গিয়ে লুটিয়ে পড়ছি— বহুসস্তানবতী মা যেমন অর্ধমনস্ক অথচ নিশ্চল সহিষ্ণু ভাবে আপন শিশুদের আনাগোনার প্রতি তেমন দৃকপাত করেন না, তেমনি আমার পৃথিবী এই দুপুরবেলায় ঐ আকাশপ্রাস্তের দিকে চেয়ে বহু আদিমকালের কথা ভাবছেন, অামার দিকে তেমন লক্ষ্য করছেন না ; আর আমি কেবল অবিশ্রাম বকে যাচ্ছি। এই ভাবে একরকম কেটে যাচ্ছে। প্রায় বিকেল হয়ে এল । এখন শীতের বেলা কিনা, দেখতে দেখতে রোদছর পড়ে যায়। У о > 86: