পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У У о ভালো করে ভেবে দেখলে হাসি পায় যে, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠত থাকলেও ইহজীবনে ঘটে মানুষে কতটুকু অংশ রেখায় রেখায় সংলগ্ন। যাকে দশ বছর জানি তাকে দশটা বছরের কত সুদীর্ঘ অংশই জানি নে ; বোধ করি আজীবন সম্পর্কেরও জমাখরচ হিসাব করলেও তেমন বড়ো অঙ্ক হাতে থাকে না। সে কথা ভেবে দেখলে সবাইকেই অপরিচিত বলে বোধ হয় ; তখন বুঝতে পারি, খুব বেশি পরিচয় হবার কথা নেই, কেননা তু দিন পরে বিচ্ছিন্ন হতেই হবে। আমাদের পূর্বে কোটি কোটি লোক এই সূর্যালোকে, নীলাকাশের নীচে, জীবনের পান্থশালায় মিলেছে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে, বিস্মৃত হয়ে, অপস্থত হয়ে গেছে। এরকম ভেবে দেখলে কোনো কোনো প্রকৃতিতে বৈরাগ্যের উদয় হয়, কিন্তু আমার ঠিক উপ্টোই হয় ; আমার আরও বেশি ক’রে দেখতে, বেশি ক’রে জানতে ইচ্ছা করে । এই-যে আমরা কয়েকজন প্রাণী জড়-মহাসমুদ্রের বুদবুদের মতো ভেসে এক জায়গায় এসে ঠেকেছি, এই অপূর্ব সংযোগটুকুর মধ্যে যত বিস্ময়, যত আনন্দ, তা আবার শত যুগে গড়ে উঠবে কি না সন্দেহ। তাই কবি বসন্তরায় লিখছেন— নিমিষে শতেক যুগ হারাই হেন বাসি। বাস্তবিক, মানুষের এক নিমেষের মধ্যে শত যুগেরই সংযোগবিয়োগ তো ঘটে । এবারে চলে আসবার আগে যেদিন একদিন দুপুর বেলায় স– পার্ক স্ত্রীটে এসেছিলেন, পিয়ানো বাজছিল, আমি গান গাবার উদ্যোগ করছিলুম, হঠাৎ এক সময়ে সকলের দিকে চেয়ে আমার মনে হল, অনন্তকালের অসীম ঘটনাপরম্পরার মধ্যে २२8