পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাক্যব্যয়ে গম্ভীর প্রশান্ত ভাবে সেই মাস্তুলটার উপর গিয়ে চেপে বসল। ছেলেদের এমন সাধের খেলা মাটি । তুই-একজন ভাবলে, এমন স্থলে হার মানাই ভালো ; তফাতে গিয়ে তারা মানমুখে সেই মেয়েটির অটল গাম্ভীর্য নিরীক্ষণ করতে লাগল। ওদের মধ্যে একজন এসে পরীক্ষাচ্ছলে মেয়েটাকে একটু একটু ঠেলতে চেষ্টা করলে। কিন্তু সে নীরবে নিশ্চিন্তমনে বিশ্রাম করতে লাগল। সর্বজ্যেষ্ঠ ছেলেটি এসে তাকে বিশ্রামের জন্যে অন্ত স্থান নির্দেশ ক’রে দিলে, সে তাতে সতেজে মাথা নেড়ে কোলের উপর দুটি হাত জড়ো করে নড়েচড়ে আবার বেশ গুছিয়ে বসল। তখন সেই ছেলেটা শারীরিক যুক্তি প্রয়োগ করতে আরম্ভ করলে এবং অবিলম্বে কৃতকার্য হল। আবার অভ্ৰভেদী আনন্দধ্বনি উঠল, পুনর্বার মাস্তুল গড়াতে লাগল — এমন-কি, খানিক ক্ষণ বাদে মেয়েটাও তার নারীগৌরব এবং সুমহং নিশ্চেষ্ট স্বাতন্ত্র্য ত্যাগ করে কৃত্রিম উৎসাহের সঙ্গে ছেলেদের এই অর্থহীন চপলতায় যোগ দিলে। কিন্তু বেশ বোঝা যাচ্ছিল, সে মনে মনে বলছিল— ছেলেরা খেলা করতে জানে না, কেবল যত রাজ্যের ছেলেমামুষি । হাতের কাছে যদি একটা খোপাওয়ালা হলদে রঙের মাটির বেনে-পুতুল থাকত তা হলে কি সে আর এই অপরিণতবুদ্ধি নিতান্ত শিশুদের সঙ্গে মাস্তুল ঠেলার মতো এমন একটা বাজে খেলায় যোগ দিত। এমনসময় আর-এক রকমের খেলা তাদের মনে এল, সেটাও খুব মজার । ছজন ছেলেতে মিলে একটা ছেলের হাত পা ধরে ঝুলিয়ে তাকে দোলা দেবে। এর ভিতরে খুব একটা রহস্য আছে সন্দেহ নেই, কারণ ছেলেরা বেজায় উৎফুল্ল হয়ে উঠল। কিন্তু মেয়েটার পক্ষে অসহ্য হল । সে অবজ্ঞাভরে ক্রীড়াক্ষেত্র ত্যাগ করে ঘরে চলে গেল। হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটল। যাকে দোলাচ্ছিল সে গেল পড়ে। সেই অভিমানে সে সঙ্গীদের ত্যাগ করে १२