পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(১০০ )

বাসনা এবং সাধনা-অনুরূপ পরকাল থাকে তাহলে এবার আমি এই ওয়াড়-পরানোপৃথিবী থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেন এক উদার উন্মুক্ত সৌন্দর্য্যের আনন্দলোকে গিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি। যারা সৌন্দর্য্যের মধ্যে সত্যি সত্যি নিমগ্ন হতে অক্ষম তারাই সৌন্দর্য্যকে কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়ের ধন বলে অবজ্ঞা করে —কিন্তু এর মধ্যে যে অনির্ব্বচনীয় গভীরতা আছে, তার আস্বাদ যারা পেয়েচে তারা জানে সৌন্দর্য্য ইন্দ্রিয়ের চূড়ান্ত শক্তিরও অতীত—কেবল চক্ষু কর্ণ দূরে থাক্‌, সমস্ত হৃদয় নিয়ে প্রবেশ করলেও ব্যাকুলতার শেষ পাওয়া যায় না।

 আমি ভদ্রলোক সেজে সহরের বড় রাস্তায় আনাগোনা করচি, পরিপাটী ভদ্রলোকদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথাবার্ত্তা কয়ে জীবন মিথ্যে কাটিয়ে দিচ্চি! আমি অন্তরে অসভ্য অভদ্র—আমার জন্যে কোথাও কি একটা ভারি সুন্দর অরাজকতা নেই, কতকগুলো ক্ষ্যাপী লোকের আনন্দমেলা নেই। কিন্তু আমি কি এ সমস্ত বকচি—কাব্যের নায়কেরা এইরকম সব কথা বলে—কনভেন্‌শ্যানালিটির উপরে তিন-চার পাতযোড়া স্বগত উক্তি প্রয়োগ করে—আপনাকে সমস্ত মানবসমাজের চেয়ে বড় মনে করে। বাস্তবিক এ সব কথা বল্‌তে লজ্জা করে। এর মধ্যে যে সত্যটা আছে সে বহুকালথেকে ক্রমাগত কথাচাপা পড়ে আস্‌চে। পৃথিবীতে সবাই ভারি কথা কয়—তার মধ্যে আমি একজন অগ্রগণ্য—হঠাৎ এতক্ষণে সে বিষয়ে চেতন হল।

 পুঃ—আসল যে কথাটা বল্‌তে গিয়েছিলুম—সেটা বলে নিই—ভয় নেই, আবার চার পাতা জুড়বেনা—কথাটা হচ্চে—পয়লা আষাঢ়ের দিন বিকেলে খুব মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে। বাস্‌।