পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ৯ই ডিসেম্বর । এখন একলাটি আমার সেই বোটের জানলার কাছে অধিষ্ঠিত হয়ে বহুদিন পরে একটু মনের শাস্তি পেয়েছি । স্রোতের অমুকুলে বোট চলচে, তাব উপর পাল পেয়েচে—দুপুরবেলাকার রোদরে শীতের দিনটা ঈষৎ তেতে উঠেছে, পদ্মায় নেীকে নেই—শূন্ত বালির চর, হলদে রং, একদিকে নদীর নীল আর একদিকে আকাশের নীলের মাঝে একটি রেখার মত অণকা রয়েচে—জল কেবল উত্তরে বাতাসে খুব অল্প অল্প চিক্‌ চিক করে কঁপিচে, ঢেউ নেই । আমি এই খোলা জানলার ধারে হেলান দিয়ে বসে আছি ; তামার মাথায় অল্প অল্প বাতাস লাগচে বেশ আরাম করচে । অনেকদিন তীব্র রোগভোগের পর শরীরটা শিথিল দুৰ্ব্বল অবস্থায় আছে, এইরকম সময় প্রকৃতির এই ধীর স্নিগ্ধ শুশ্রম ভারি মধুর লাগচে—এই শীতশীর্ণ নদীর মত আমার সমস্ত অস্তিত্ব যেন মৃত্যু রোঁদে পড়ে অলসভাবে ঝিক্‌ ঝিক করচে, এবং যেন অৰ্দ্ধেক আনমনে চিঠি লিখে যাচ্চি। প্রতিবার এই পদ্মার উপর আসবার আগে ভয় হয় আমার পদ্ম। বোধ হয় পুরোণে হয়ে গেছে—কিন্তু যথনি বোট ভাসিয়ে দিই, চারিদিকে জল কুল কুল করে উঠে—চারিদিকে একটা স্পন্দন কম্পন আলোক আকাশ মৃত্যু কলধ্বনি, একটা সুকোমল নীল বিস্তার, একটি স্থনবীন শুণমল রেখা, বর্ণ এবং নৃত্য এবং সঙ্গীত এবং সৌন্দর্য্যের একটি নিত্য উৎসব উদঘাটিত হয়ে যায় তখন আবার নতুন করে আমার হৃদয় যেন অভিভূত হয়ে যায় । এই পৃথিবীটি আমার অনেকদিনকার এবং অনেক জন্মকার ভালবাসার লোকের মত আমার কাছে চিরকাল নতুন ; আমাদের দুজনকার মধ্যে একটা খুব গভীর এবং সুদূরব্যাপী চেনাশোনা আছে । আমি বেশ মনে করতে পারি, বহুযুগ পূৰ্ব্বে যখন তরুণী পৃথিবী সমুদ্রস্নান থেকে সবে মাথ৷ তুলে উঠে তখনকার নবীন স্বর্য্যকে বন্দনা করচেন, তখন আমি এই পৃথিবীর নুতন মাটিতে কোথা থেকে এক প্রথম জীবনোছ,াসে গাছ হয়ে পল্লবিত হয়ে উঠেছিলুন । י