পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহাজাদপুর, ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ । অনেককাল বোটের মধ্যে বাস করে হঠাৎ সাজাদপুরের বাড়িতে এসে উত্তীর্ণ হলে বড় ভাললাগে । বড় বড় জানলাদরজা –চারিদিক থেকে আলো বাতাস আসচে—যে দিকে চেয়ে দেখি সেই দিকেই গাছের সবুজ ডালপালা চোখে পড়ে এবং পার্থীর ডাক শুনতে পাই ; দক্ষিণের বারান্দায় কেবলমাত্র কামিনীফুলের গন্ধে মস্তিষ্কের সমস্ত রন্ধ পূর্ণ হয়ে ওঠে । হঠাৎ বুঝতে পারি এতদিন বৃহৎ আকাশের জন্যে ভিতরে ভিতরে একটা ক্ষুধা ছিল সেটা এখানে এসে পেটভরে পূর্ণ করে নেওয়া গেল । আমি চারটি বৃহৎঘরের একলা মালিক—সমস্ত দরজাগুলি খুলে বসে থাকি । এথানে যেমন আমার মনে লেখবার ভাব ও ইচ্ছা আসে এমন কোথাও না । বাইরের জগতের একটা সজীব প্রভাব ঘরে অবাধে প্রবেশ করে, আলোতে তাকাশে বাতাসে শব্দে গন্ধে সবুজ হিল্লোলে এবং আমার মনের নেশায় মিশিয়ে কত গল্পের ছাচ তৈরি হয়ে ওঠে। বিশেষত এখানকার দুপুরবেলাকার মধ্যে একটা নিবিড় মোহ আছে । রৌদ্রের উত্তাপ, নিস্তব্ধতা, নির্জনতা, পার্থীদের, বিশেষত, কাকের ডাক, এবং সুন্দর সুদীর্ঘ অবসর—সবসুদ্ধ আমাকে উদাস করে দেয় । কেন জানিনে, মনে হয়, এই রকম সোনালি রৌদ্রেভরা দুপুরবেল দিয়ে আরব্যউপন্যাস তৈরি হয়েছে— অর্থাৎ সেই পারস্য এবং আরব্যদেশ, দামাস্ক, সমরকন্দ, বুখারা—আঙুরের গুচ্ছ, গোলাপের বন, বুলবুলের গান, শিরাজের মদ;—মরুভূমির পথ, উটের সার, ঘোড়সওয়ার পথিক, ঘনখেজুরের ছায়ায় স্বচ্ছজলের উৎস,—নগরের মাঝে মাঝে চাদোয়াখাটানো সঙ্কীর্ণ বাজারের পথ, পথের প্রাস্তে পাগড়ি এবং ঢিলে কাপড়পরা দোকানী খৰ্ম্মজ এবং মেওয়া বিক্রি করচে ; পথের ধারে বৃহৎ রাজপ্রাসাদ, ভিতরে ধুপের গন্ধ, জানলার কাছে বৃহৎ তাকিয়া এবং কিংখাব বিছানো ; জরির চটি, ফুলে পায়জামা এবং রঙিন কাচলি পর আমিন জোবেদি সুফি, পাশে পায়ের কাছে কুণ্ডলায়িত্ত গুড়গুড়ির