পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোয়ালিয়া, ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ । আমরা যখন খুব বড় রকমের একটা আত্মবিসর্জন করি তখন কেন করি ? একটা মহৎ আবেগে আমাদের ক্ষণিক জীবনটা আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার সুখদুঃখ আমাদের আর স্পর্শ করতে পারে না । আমরা হঠাৎ দেখতে পাই আমরা আমাদের সুখদুঃখের চেয়ে বড়, আমরা প্রতিদিনের তুচ্ছবন্ধন থেকে মুক্ত। মুখের চেষ্টা এবং দুঃখের পরিহার, এই আমাদের ক্ষণিকজীবনের প্রধান নিয়ম কিন্তু এক একটা সময় আসে যখন আমরা আবিষ্কার করতে পারি যে, আমাদের ভিতরে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে সে নিয়ম খাটে না । তখন আমরা আমাদের ক্ষণিক জীবনটাকে পরাভূত করেই একটা আনন্দ পাই, দুঃখকে গলার হার করে নিয়েই মনে উল্লাস জন্মায় । তথন মনে হয় অস্তরের সেই স্বাধীন পুরুষের বলেই সুখদুঃখের ভিতর দিয়ে চিরকাল আমি আমার প্রকৃতির সফলতাসাধন করব। কিন্তু আবার চারিদিকের সংসারের জনতা, প্রতিদিনের ক্ষুধাতৃষ্ণা, প্রবল হয়ে উঠে সেই অন্তরতম স্বাধীনতার ক্ষেত্রটিকে আমাদের চোখ থেকে ঢেকে ফেলে, তখন আত্মবিসর্জন সুকঠিন হয়ে ওঠে । আমি যখন একল। মফস্বলে থাকি তখন প্রকৃতির ভিতরকার আনন্দ আমার অন্তরের আনন্দনিকেতনের দ্বার খুলে দেয় ; গানের স্বরের দ্বারা গানের কথাগুলো যেমন অমরতা প্রাপ্ত হয় তেমনি প্রাত্যহিক সংসারটা অস্তরের চিরানন্দরাগিণীর দ্বারা চিরমহিমা লাভ করে ; আমাদের সমস্ত স্নেহপ্রীতির সম্বন্ধ একটি বিনম্র ধৰ্ম্মোপাসনার ভাবে জ্যোতিৰ্ম্ময় হয়ে ওঠে,—দুঃখবেদনার দুঃখত্ব যে চলে যায় তা নয় কিন্তু সে যেন আমার নিজত্বের সঙ্কীর্ণ সীমা অতিক্রম করে এমন সুবৃহৎ আকাশে ব্যাপ্ত হয় যে সেখানে সে একটা সৌন্দর্য্য বিকিরণ করতে থাকে । এবার বোটে থাকৃতে আমি অন্তর্যামী নামক একটি কবিতা লিখেছি তাতে আমি আমার অন্তরজীবনের কথা অনেকটা প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি !