পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসর >brs > l আমার বোট কাছারির কাছ থেকে অনেক দূরে এনে একটি নিরিবিলি জায়গায় বেঁধেছি । এ দেশে গোলমাল কোথাও নেই, ইচ্ছে করলেও পাওয়া যায় না, কেবল হয়ত অন্যান্য বিবিধ জিনিসের সঙ্গে হাটে পাওয়া যতে পারে —আমি এখন যেখানে এসেছি এ জায়গায় অধিকন্তু মানুষের মুখ দেখা যায় না । চারিদিকে কেবল মাঠ ধৃ ধূ করচে–মাঠের শস্ত কেটে নিয়ে গেছে, কেবল বণটা ধানের গোড়াগুলিতে সমস্ত মাঠ আচ্ছন্ন । সমস্ত দিনের পর স্থৰ্য্যাস্তের সময় এই মাঠে কাল একবার বেড়াতে বেরিয়েছিলুম ! সূৰ্য্য ক্রমেই রক্তবর্ণ হয়ে একেবারে পৃথিবীর শেষরেখার অন্তরালে অন্তষ্ঠিত হয়ে গেল । চারিদিক কি যে সুন্দর হয়ে উঠল সে আর কি বল্ব । বহুদূরে একেবারে দিগন্তের শেষ প্রান্তে একটু গাছপালার ঘের দেওয়া ছিল, সেখানটা এমন মায়াময় হয়ে উঠল, নীলেতে লালেতে মিশে এমন আৰূ ছায়া হয়ে এল,—মনে হল ঐখানে যেন সন্ধ্যার বাড়ি, ঐখানে গিয়ে সে আপনার রাঙা আঁচলটি শিথিলভাবে এলিয়ে দেয়, আপনার সন্ধ্যাতারাটি যত্ন করে জালিয়ে তোলে, আপন নিভৃত নির্জনতার মধ্যে সিদুর পরে’ বধুর মত কণর প্রতীক্ষায় বসে থাকে, এবং বসে বসে পা দুটি মেলে তারার মালা গাথে এবং গুন গুন স্বরে স্বপ্ন রচনা করে । সমস্ত অপার মাঠের উপর একটি ছায় পড়েছে— একটি কোমল বিষাদ–ঠিক অশ্রুজল নয়—একটি নির্নিমেষ চোখের বড় বড় পল্লবের নীচে গভীর ছলছলে ভাবের মত । এমন মনে করা যেতে পারে—ম পৃথিবী লোকলয়ের মধ্যে আপন ছেলে-পুলে এবং কোলাহল এবং ঘরকরনার কাজ নিয়ে থাকে, যেখানে একটু ফাক, একটু নিস্তব্ধতা, একটু খোলা আকাশ, সেইখানেই তার বিশাল হৃদয়ের অস্তনিহিত বৈরাগ্য এবং বিষাদ ফুটে ওঠে, সেইখানেই তার গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস শোনা যায়। ভারতবর্ষে যেমন বাধাহীন পরিষ্কার আকাশ, বহুদুরবিস্তৃত সমতলভূমি আছে এমন যুরোপের কোথাও আছে কিনা সন্দেহ । બરે জন্তে আগমণদের জাতি যেন বৃহৎ পৃথিবীর সেই অসীম বৈরাগা মাৰিস্কার করতে পেরেছে,—এই জন্তে আমাদের