পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( 8 २ ) জলস্থলের অধিকার নির্দিষ্ট হয়ে যায়নি । চারিদিকে জেলেদের বঁাশ পোতা—জেলেদের জাল থেকে মাছ ছে৷ মেরে নেবার জন্যে চিল উড়চে, পাকের উপরে নিরীহ বক দাড়িয়ে আছে—নানারকমের জলচর পার্থী—জলে শ্যাওলা ভাসচে—মাঝে মাঝে পাকের মধ্যে অযত্নসস্তুত ধানের গাছ, স্থির জলের উপর বাকে বণকে মশা উড়চে । ভোরের বেলা বোট ছেড়ে দিয়ে কাচিকাঠায় গিয়ে পড়া গেল । একটি বারো তেরে। হাত সঙ্কীর্ণ খালের মত, ক্রমাগত একে বেঁকে গেছে—সমস্ত বিলের জল তারি ভিতর দিয়ে প্রবল বেগে নিস্ত্রণস্ত হচ্চে—এর মধ্যে আমাদের এই প্রকাণ্ড বোট নিয়ে বিষম কাণ্ড—জলের স্রোত বিদ্যুতের মত বোটটাকে টেনে নিয়ে যাচ্চে, দাড়ির লগি হাতে করে সামূলাবার চেষ্টা করচে, পাছে ডাঙার উপর বোটটাকে আছড়ে ফেলে । এদিকে হু হু করে বাদলার বাতাস দিচ্চে, ঘন মেঘ করে রয়েছে, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্চে, শীতে সবাই কঁপিচে । ক্রমে খোলা নদীতে এসে পড়লুম । শীতকালে মেঘাচ্ছন্ন ভিজে দিন ভারি বিশ্ৰী লাগে । সকালবেলাট তাই নিতান্ত নিজীবের মত ছিলুম। বেলা দুটোর সময় রোদ উঠল । তার পর থেকে চমৎকার । খুব উচু পাড়ে বরাবর দুই ধারে গাছপালা লোকালয় এমন শান্তিময়, এমন সুন্দর, এমন নিভূত—দুই ধারে স্নেহসৌন্দৰ্য্য বিতরণ করে নদীটি বেঁকে বেঁকে চলে গেছে—আমাদের বাংলাদেশের একটি অপরিচিত অন্তঃপুরচারিণী নদী। কেবল স্নেহ এবং কোমলতা এবং মাধুর্য্যে পরিপূর্ণ। চাঞ্চল্য নেই, অথচ অবসরও নেই । গ্রামের যে মেয়ের ঘাটে জল নিতে আসে, এবং জলের ধারে বসে বসে অতি যত্নে গামছা দিয়ে আপনার শরীরখানি মেজে তুলুতে চায় তাদের সঙ্গে এর যেন প্রতিদিন মনের কথা এবং ঘরকন্নার গল্প চলে । আজ সন্ধ্যাবেলায় নদীর বাকের মুখে ভারি একটি নিরালা জায়গায় বোট লাগিয়েছে। পূর্ণিমার চাদ উঠেছে, জলে একটিও নৌকা নেই—জ্যোৎস্না জলের উপর ঝিকঝিক করচে–পরিষ্কার রাত্ৰি—নির্জন তীর—বহুদূরে ঘনত্বক্ষবেষ্টিত গ্রামটি স্বযুপ্ত— কেবল বি বি ডাকচে আর কোন শব্দ নেই। جس-- س-حساسیت